এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    পশ্চিমবঙ্গ - ফলাফল কী হতে চলেছে - সঞ্জয় সরকার | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়লোকসভা ভোট শেষ দফায়। এবার ভোটে উত্তুঙ্গ কোনো উদ্দীপনা ছিলনা, ছিলনা কোনো হাওয়া, চাপা এক উৎকণ্ঠা নিয়ে ভোট হয়েছে। সেই ধারা শেষ দফায়ও অব্যাহত। রাজনৈতিক পটচিত্রে উত্তেজনার অবশ্য কোনো অভাব হয়নি। অভাব হয়নি নাটকীয়তার। ভোটের ঠিক আগে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত রায় এসেছে সুপ্রিম কোর্টের। নির্বাচনের মধ্যেই এসেছে কলকাতা হাইকোর্টের পরপর দুটি রায়। একটিতে বিপুল সংখ্যক রাজ্য সরকারি শিক্ষককে কর্মচ্যুত করা হয়েছে, অন্যটিতে ২০১০ সালের পর পশ্চাদপদ অংশের সংরক্ষণকে একরকম করে বাতিল করা হয়েছে। দুটির চূড়ান্ত রায়ই অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে। সন্দেশখালি ভোটের আগে থেকেই শিরোনামে। কিন্তু ভোটের মধ্যে এসেছে নতুন চমক। গঙ্গাধর কয়ালের এবং আরও কয়েকটি ভিডিও ফাঁস হয়ে ভাইরাল। এসেছে স্বয়ং রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ।এত চাপান-উতোরের মধ্যে, কলকাতায় ভোটের ঠিক আগে, লাখ টাকার প্রশ্ন একটাই। পশ্চিমবঙ্গে কে জিততে চলেছে। কেন্দ্রে সরকার যেই গড়ুক, পশ্চিমবঙ্গে জুন মাসের চার তারিখে কার গলায় উঠবে বিজয়ীর মালা। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই দাবী করে আসছে, এবার পশ্চিমবঙ্গ তাদের। ৪২ এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ এইরকম নানাসংখ্যক আসনপ্রাপ্তির দাবী শোনা যাচ্ছে কান পাতলেই। তাদের কর্মসূচি পরিষ্কার। একদিকে ধর্মীয় মেরুকরণ তৈরি, অন্যদিকে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসকে অসহায় ঠুঁটো জগন্নাথ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত, অপদার্থ প্রমাণ করা। এই অ্যাজেন্ডায় সন্দেশখালি নিয়ে মিডিয়াজোড়া হইচই তাদের পালে হাওয়া দিয়েছিল নিঃসন্দেহে। হাইকোর্টের দুখানি রায়ই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে, এ নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। ২১ সালের মতই, ভোট যখন শুরু হয় তখন তাদেরই হট-ফেভারিট মনে হচ্ছিল। প্রথম দফার ভোটের পরও সেই অবস্থা বদলায়নি। কিন্তু একই সঙ্গে এও ঠিক, দ্বিতীয় দফার ভোটের পর থেকেই সেই হাওয় ফিকে হতে শুরু করে। পরের দফার দিনই আসে হাইকোর্টের রায়। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়া এই রায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে কোর্টের উপর রাজনৈতিক প্রভাবের ন্যারেটিভকেও সামনে এনে দিয়েছে। এক দফায় এতগুলো চাকরি চলে চলে যাওয়াকে বহু মানুষই সহজভাবে নেননি। তার উপর এসেছে একাধিক ভিডিও এবং রাজ্যপালের উপর প্রভাব। এর মধ্যে কোনো একটা, বা সবকটা কারণেই, বিজেপির অগ্রগতি উত্তর থেকে দক্ষিণে, প্রথম থেকে দ্বিতীয়-তৃতীয় দফায় অনেকটাই ফিকে হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন, এমনকি শুভেন্দুর গড়ে নতুন দুখানা আসন পেয়ে গেলেও, আগের বারের আসন সংখ্যা ধরে রাখাই বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ। সেটাও আদৌ সম্ভব নাও হতে পারে।উল্টোদিকে তৃণমূলের তরফ থেকেও গোটা তিরিশেক আসনের দাবী শোনা যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে নানারকম দুর্নীতির মামলায় এবং সন্দেশখালির তীব্র মিডিয়া ফোকাসে তৃণমূল এবার কিছুটা বিপাকে ছিল। কিন্তু বিজেপির ফিকে হয়ে যাওয়াটা অবশ্যই তৃণমূলের পক্ষে গেছে। শুধু ভাইরাল ভিডিও বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগই না, অভিজিৎ গঙ্গ্যোপাধ্যায়ের বিজেপির প্রার্থী হওয়া থেকে শুরু করে আরেক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নিজমুখে আরেসেস যোগের কথা ঘোষণা করা, সবকটাই তৃণমূল-বনাম- বিজেপি বাইনারি তৈরি করতে সহায়তা করেছে এবং ভোট যত এগিয়েছে, সেটা তৃণমূলের পক্ষেই গেছে। লক্ষ্যণীয় এই, যে, ২১ সালে বরং তৃণমূলকে অনেক বেশি নড়বড়ে লাগছিল। দলে দলে নেতা 'দলে থেকে কাজ করতে পারছিলাম না' বলে দল ছাড়ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে জয়-শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে উত্যক্ত করা হচ্ছিল। এবার সেসবের চিহ্নমাত্র নেই। তৃণমূলের ভিতরে জেতা নিয়ে কোনো সংশয় থাকলে, ওই স্রোত আবারও দেখা যেত, নিঃসন্দেহে। এবার বরং উল্টো হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির প্রার্থীরা বুথের ধারেকাছে গেলে গো-ব্যাক স্লোগান উঠছে। উত্যক্ত করা হচ্ছে। ভোট শেষে নিয়ম করে তৃণমূল কর্মীরা পালন করছেন বিজয়োৎসব। ভাইরাল ভিডিও ছাড়া হচ্ছে নিয়ম করে। তৃণমূলের মতো ক্লাবসদৃশ দলের পক্ষে এ একেবারেই অভূতপূর্ব। সব মিলিয়ে প্রথম দফার পর থেকেই তৃণমূল পরিকল্পনামাফিক এগিয়েছে। তাদের হাঁটু ২১ সালের মতো কাঁপছেনা। গতবারের লোকসভার আসন সংখ্যা এবার বাড়া, আশ্চর্য কিছু না।হিসেব গুলিয়ে দিতে মঞ্চে অবশ্যই আছেন তৃতীয় পক্ষ। বাম-কংগ্রেস জোট। শোনা যাচ্ছে, অন্তত কিছু আসনে তাঁদের ভোট বাড়বে। এবং তত্ত্বগতভাবে হিসেব এখানে খুব সহজ। তাঁদের বাড়া ভোট যদি হারিয়ে যাওয়া ভোটব্যাঙ্ক অর্থাৎ রাম-ভোট থেকে আসে, তো তৃণমূলের বিজয়রথের গতি আরও বাড়বে। উল্টোদিকে, সেই বাড়তি ভোট যদি আসে তিতিবিরক্ত তৃণমূল ভোটারদের কাছ থেকে, তাহলে তৃণমূলের এত পরিকল্পনা সত্ত্বেও চাকা বসতে বাধ্য। অবশ্য, এও হতে পারে, বাম-ভোট আদতে তেমন বাড়লনা। ভোটের আগে তেমন মনে হচ্ছিলনা। কিন্তু ভোট যত গড়াচ্ছে, ততই একদিকে অন্তত কিছু আসনে যেমন দেখা যাচ্ছে লাল-পকাকার ভিড়, তেমনই মিডিয়ায় তৈরি হচ্ছে তীব্র বাইনারি। যেকোনো টিভি খুললেই দেখা যায় রাজনৈতিক আলোচনায় কেবল দুটি পক্ষ, তৃণমূল এবং তৃণমূল- বিরোধী, অর্থাৎ বিজেপি। এই দুটি পক্ষের মধ্যেই চাপান-উতোর, এবং বামরা যে বাইনারির বিরুদ্ধে রাস্তায় বলছেন, সেটা তাঁদেরই আলোচকরা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করছেন টিভির পর্দায়। এই গুলিয়ে যাওয় নীতি, সেটা ইন্ডিয়া জোট বনাম সেটিং তত্ত্বের মধ্যেও পরিষ্কার। রাস্তার হিসেব, তরুণ প্রার্থীদের পরিশ্রম ধরলে বামদের কিছু ভোট অবশ্যই বাড়া উচিত, কিন্তু গুলিয়ে যাওয়া আর তীব্র মেরুকরণের মধ্যে সেটা কতটা হবে বলা কঠিন। সব মিলিয়ে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবারও তৃণমূল-বিজেপির মধ্যেই। প্রথম স্থান তৃণমুলই পাবে, এখনও মনে হচ্ছে, কিন্তু বিজেপি ভয়াবহ কিছু ইছিয়ে থাকবে এমনটা নাই হতে পারে। বামদের কতটা উত্থান হয় এবং সেটা রাম-ভোট কেটে হয় কিনা, তার উপর ব্যাপারটা অনেকটাই নির্ভর করছে
    পায়েল কাপাডিয়ার ছবি, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি - সোমনাথ গুহ | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়আমাদের দেশে লাভ অত্যন্ত পলিটিকাল, সদ্য সমাপ্ত কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ফিচার ছবি ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’ সম্পর্কে চিত্র পরিচালক পায়েল কাপাডিয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন। পারিবারিক বাধা বিপত্তি আছে, এছাড়া জাতপাত, ধর্ম ইত্যাদি তো আছেই, তিনি ব্যাখ্যা করেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সাম্প্রতিক ভারতে তাঁর এই কথাটা ভয়ঙ্কর ভাবে সত্যি। ‘লাভ জিহাদ’ শব্দবন্ধটি এক দশক আগেও আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল। কত মানুষ এর বলি হল, কত সম্পর্ক অকালে নষ্ট হয়ে গেল, পড়শিদের মধ্যে, সহপাঠীদের মধ্যে, অফিস কলিগদের মধ্যে কত অদৃশ্য, অনতিক্রম্য দেয়াল খাড়া হয়ে গেল। এর মধ্যে আবার অভিন্ন দেওয়ান বিধি (ইউনিভার্সাল সিভিল কোড) এসে গেল; উত্তরাখন্ডে এখন থেকে বিবাহ তো বটেই, লিভ-ইন সম্পর্কও নিবন্ধীকরণ করতে হয়। ‘অল উই ইমাজিন……’ প্রতিযোগিতায় গ্রাঁ প্রি পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে। সেই কবে ১৯৪৬ সালে প্রথম কান চলচ্চিত্র উৎসবে চেতন আনন্দের নীচা নগর, যা প্রবাদপ্রতিম রুশ সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কির ‘দ্য লোয়ার ডেপথ’ অবলম্বনে রচিত, গ্রাঁ প্রি পুরষ্কার জিতেছিল। এর পরে ১৯৫৬য় সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’ বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট পুরষ্কার পায় এবং ১৯৮৩তে মৃণাল সেনের ‘খারিজ’ জুরি পুরষ্কার লাভ করে। সেই ১৯৯৪ সালে উৎসবের সেরা ছবির পুরস্কার পাম ডি’অর এর জন্য শাজি কারুণের ছবি ‘স্বয়ম’ নির্বাচিত হয়েছিল। তাই তিন দশক বাদে ওই বিভাগে পুরস্কৃত হয়ে পায়েল কাপাডিয়া উচ্ছসিত হয়ে বলে ওঠেন, এই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য কোন ভারতীয় ছবিকে যেন আর তিরিশ বছর অপেক্ষা না করতে হয়।মঞ্চে পুরষ্কার গ্রহণ করার পর পরিচালক কলাকুশলীদের এবং বিশেষ করে তাঁর তিন প্রধান অভিনেত্রীর অকুন্ঠ প্রশংসা করেন। কিন্তু যেটা তাৎপর্যপূর্ণ তা হল ‘অ্যাকসেপ্টেন্স স্পিচে’র অন্তিমে তিনি যে কর্মীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে এই উৎসব সাফল্যমন্ডিত করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানান, সর্বোপরি তাঁদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান। প্রসঙ্গত উৎসবের শুরু থেকেই কর্মরত শ্রমিকদের সংগঠন যার নাম, ‘দ্য পভার্টি বিহাইন্ড দ্য সিনস্‌’ দুটি মূল দাবীতে আন্দোলন করেছেন ---- কাজের সময় বেড়ে যাওয়ার সাথে সঙ্গতি রেখে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি এবং তাঁদের ঠিকা বিনোদন কর্মী হিসাবে স্বীকৃতি। পায়েল কাপাডিয়ার ছবিতেও এই রাজনৈতিক সচেতনতার আভাস পাওয়া যায়। তাঁর ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল রাজনীতি আর ব্যক্তিগত জীবন সমান্তরাল ভাবে চলে, এমনও মনে হতে পারে যেন দুটো ভিন্ন কাহিনি। রাজনীতি বলতে দলীয় মিটিং, মিছিল নয়, কোন ইস্যু, বিক্ষোভ, প্রতিবাদকে পূর্বনির্ধারিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা নয়, নির্মোহ ভাবে বৃহত্তর ও ব্যক্তিগত পরিসর কে ফুটিয়ে তোলা। পায়েল আগেও কান উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন, পুরষ্কার জিতেছেন। ২০১৭ সালে তাঁর ‘আফটারনুন ক্লাউডস’ একমাত্র ভারতীয় ছবি যা উৎসবে নির্বাচিত হয়েছিল। ২০২১ সালে তাঁর তথ্যচিত্র ‘আ নাইট অফ নোইং নাথিং’ সেরা ডকুমেন্টারি ছবির জন্য ‘গোল্ডেন আই’ পুরষ্কার পায়। এই ছবিতে ২০১৫ সালে FTII এ মহাভারত-খ্যাত গজেন্দ্র চৌহানকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ করার প্রতিবাদে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা দেখান হয়েছে। প্রসঙ্গত পরিচালক নিজে এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন যার জন্য তিনি প্রায় সাড়ে চার মাস ক্লাস বয়কট করেছিলেন এবং তাঁর অনুদানও বন্ধ হয়ে গেছিল। ছাত্রদের এই প্রতিবাদ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে এক কলেজের ছাত্রী তার প্রেমিকের অনুপস্থিতি অনুভব করছে। একই চিঠিতে সে লিখছে ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে সে বুঝে উঠতে পারছে না, হয়তো স্ট্রাইক করার জন্য তাঁদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মুসলিম যুবককে চোখ বেঁধে, কোমরে পিস্তল ঠেকিয়ে পুলিশের জিপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, একই সাথে মেয়েটি চিঠিতে তার চারিপাশের বাস্তব, কল্পনা, স্বপ্ন, ফ্যান্টাসি উজাড় করে দিচ্ছে। এই ভাবে পরিচালক পলিটিকাল আর পারসোনালের মধ্যে আন্তসম্পর্ক খুঁজছেন, বোঝার চেষ্টা করছেন।এমনটা নয় যে পরিচালক রাজনৈতিক ছবি করতেই সিদ্ধহস্ত বা এই ধরনের ছবি করাই তিনি মনস্থ করেছিলেন। ‘আফটারনুন ক্লাউডস’এ প্রৌঢ়া তাঁর মৃত স্বামীর স্মৃতি আঁকড়ে থাকে, তাকে স্বপ্নে দেখে। তার যুবতী পরিচারিকার প্রণয়ী জাহাজে চাকরি করে, সামান্য সময়ের জন্য তাদের দেখা হয়। দুই নারীই নিঃসঙ্গ! সেই অর্থে রাজনীতি বিবর্জিত ছবি। কিন্তু উত্তাল সময়, ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ তাঁকে নির্লিপ্ত থাকতে দেয় না। রাজনীতি ছবিতে ঢুকে পড়ে, ব্যক্তি মানুষের অস্তিত্বের পাশাপাশি জায়গা করে নেয়। পুরুষের অনুপস্থিতি ‘অল উই ইমাজিন……’ ছবিতেও ফিরে আসে। এটি মূলত দুই নার্স, প্রভা ও অনুর গল্প। প্রভার স্বামী কয়েক বছর হল বিদেশ চলে গেছে, দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ক্ষীণ। হঠাৎ সে একদিন তার থেকে একটা উপহার পায়, একটি রাইস কুকার যেটা তাদের অভাবী রান্নাঘরে বেমানান। একই সময়ে অনু তার প্রণয়ীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানর জন্য একটা ডেরা খোঁজে। প্রভা তাকে ছোট বোনের মতো আগলে রাখতে চায়, নিয়ন্ত্রণ করে। মুম্বাই শহরের কঠিন কঠোর পরিবেশে তাদের গল্প আবর্তিত হয়, শহরটাই কাহিনির একটা চরিত্র হয়ে ওঠে। আখ্যানের তৃতীয় প্রধান চরিত্র পার্বতী যার স্বামী কাপড়ের মিলে কাজ করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে শহরের সব মিল বন্ধ হয়ে যায়, পাশ্ববর্তি রত্নাগিরি থেকে শ্রমিকরা আর মুম্বাইয়ে কাজ করতে আসেন না। মুম্বাই আর শ্রমিকদের পীঠস্থান নয়, কয়েক দশকে শহরের চরিত্র পালটে যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর পার্বতীর বাসস্থান হাতছাড়া হয়ে যায়, সেখানে মল, মাল্টিপ্লেক্স গড়ে ওঠে। পার্বতীর আর সেখানে প্রবেশাধিকার নেই, সেখানে প্রবেশ করতে হলে ‘কাগজ’ চাই। পরিচালক সাক্ষাৎকারে এই কাগজের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যেন আজকের ভারতে এই কাগজের গুরুত্বের ওপর তিনি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন। তিন মূল চরিত্রের সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে তিনি নারীর মধ্যেকার কলহপ্রবণ সম্পর্ক যা আকছার বাজারি সিরিয়ালে দেখা যায় এবং যেটাকে স্বতঃসিদ্ধ ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় সেটার বিপরীতে, ছবিতে একটা ‘সিস্টারহুড’ গড়ে তুলেছেন। পরিচালকের কাছে বন্ধুত্বর গুরুত্ব অসীম; পরিবার তোমাকে বেঁধে রাখে, কিন্তু বন্ধুত্ব তোমাকে সেই বাঁধন থেকে মুক্ত করে, তিনি বলেন।
    নরেন্দ্র মোদীর গুজরাট মডেল - দ্বিতীয় পর্ব - প্রদীপ দত্ত | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়টাটার ন্যানো কারখানা২০০৮ সালের ৭ অক্টোবর ন্যানো মোটরগাড়ি তৈরির কারখানা গুজরাটের সানন্দে সরিয়ে আনার খবর বিপুল প্রচার পেয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে জমির ক্ষতিপূরণ নিয়ে দু’বছর ধরে বিক্ষোভের পর ওই বছর ৩ অক্টোবর রতন টাটা ঘোষণা করেন যে, ন্যানো তৈরির কারখানা তিনি পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। ন্যানো প্রকল্প যখন গুজরাটে এলো, উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদ থেকে মোদী নিজেকে নতুন ব্যবসায়ী বন্ধু এবং উন্নয়নকামী নেতা হিসাবে তুলে ধরলেন। ভাষণ দিতে গিয়ে পরে মোদী বারবার বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ন্যানো কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জেনেই “আমি টাটাকে একটা এসএমএস পাঠালাম, ওয়েলকাম টু গুজরাট, ব্যাপারটা এমনই সোজা”। বাস্তবে ব্যাপারটা তেমন সোজা ছিল না। টাটা মোটরস যখন পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর থেকে ন্যানো প্রকল্প প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল, মোদী একটি নিখুঁত পাবলিক রিলেশনস অপারেশন করেন। টাটাদের অভূতপূর্ব নানা ছাড়ের প্রস্তাবের মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছিল। তা এমন চুক্তি ছিল যে একাধিক আরটিআই আবেদন সত্ত্বেও গুজরাট সরকার প্রকাশ করতে চায়নি। সরকার বলেছিল যে সে তথ্য প্রকাশযোগ্য নয়, কারণ তাতে টাটা মোটরসের বাণিজ্যিক গোপনীয়তা রয়েছে। পরে সেই তথ্য ফাঁস হয়। পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ হলে চারটি রাজ্য ন্যানো কারখানা করার জন্য টাটার সঙ্গে দরবার করেছিল। কিন্তু মোদী সবচেয়ে সুবিধাজনক শর্তে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। টাটা তাই গুজরাটেই মনস্থির করেন। দশদিনের মধ্যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। অন্যান্য রাজ্যের ইচ্ছে থাকলেও টাটা মোটর্সকে জমি দেওয়ার আগে তাদের অনেক কিছু নির্ধারণ করা বাকি ছিল। মোদীর প্রস্তাব ছিল খুবই উদার। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ২০ বছরের বকেয়া রাজস্ব টাটা মোটর্স কোম্পানিকে ধার দেওয়া হয়েছে বলে ধরা হবে।v ২০ বছর পর ০.১ শতাংশ সুদ সহ তারা ওই ধার মেটাতে শুরু করবে। ধার মেটানো শুরু হবে ২০২৮ সাল থেকে। আটটি সমান বার্ষিক কিস্তিতে জমির মূল্য পরিশোধ করবে। এছাড়া বিদ্যুতের শুল্ক হ্রাস, ভর্তুকিতে বিক্রি হওয়া ১,১০০ একর জমির রেজিস্ট্রেশনের জন্য স্ট্যাম্প শুল্ক ছাড় ছাড়াও গুজরাট সরকার ন্যানো প্ল্যান্টকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুজরাটে স্থানান্তরের খরচ বহন করতে সম্মত হয়েছিল। এইসব সুবিধা বাদে সরকার বলেছিল, তাদের চার লেনের সড়ক সংযোগ দেবে, একটি বর্জ্য নিষ্পত্তি কেন্দ্রও স্থাপন করবে, পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করবে এবং টাটার টাউনশিপের জন্য আহমেদাবাদের কাছে ১০০ একর জমি দেবে ।viবিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুরেশ মেহতা ২০১৭ সালে ‘দ্য ওয়্যার’-কে বলেছেন, গুজরাট কীভাবে পুঁজিপতিদের পক্ষ নিয়েছে তার উদাহরণ হলো টাটার ন্যানো প্রকল্প। রতন টাটা শর্ত দিয়েছিলেন যে, রাজ্য সরকার ঋণ দিলে তবেই তারা প্রকল্পটি রাজ্যে নিয়ে আসবে। সরকার ন্যানো প্রকল্পকে প্রচুর কর ছাড়, সস্তায় জমি এবং বিদ্যু‍তে ভর্তুকি দিয়েছে। টাটারা ৩৩,০০০ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে চেয়েছিল। সরকার সুদহীন ১১,০০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেvii এই টাকা তারা ২০ বছর পর থেকে বেশ কিছু সমান কিস্তিতে শোধ করবে। টাটাদের রাজ্যের কর্মসংস্থান নীতি না মানার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। অথচ রাজ্যের কর্মসংস্থান নীতি অনুযায়ী যেখানে কারখানা স্থাপন করা হবে সেই অঞ্চল থেকেই ৮৫ শতাংশ কর্মশক্তি তৈরি করে নেওয়ার কথা ছিল। টাটার দাবি ছিল, কারখানার ঠিক পাশেই হাইওয়ে থাকতে হবে। অথচ প্রস্তাবিত কারখানা হাইওয়ের মাঝে অনেকটা কৃষি জমি পড়ে ছিল। সেখানে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা রাভুবা বাঘেলার জমি ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি অন্য কৃষকদের হয়েও কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন। মোদী এবং টাটা যৌথভাবে কারখানা স্থাপনের কথা ঘোষণা করার আগের দিন জিআইডিসির (গুজরাত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন) সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনায় জমির দাম নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সময় গড়িয়ে চললেও রাভুবা কম দামে জমি দিতে রাজী ছিলেন না। জিআইডিসি তখনও বলেনি যে তারা টাটার জন্য জমি কিনছে। রাত দশটা নাগাদ আলোচনা ভেস্তে যেতে বসলে, জিআইডিসির সেক্রেটারি বললেন, ন্যানো কারখানার জন্য জমি নেওয়া হচ্ছে, কাল আমেদাবাদে রতন টাটা আসছেন, তাদের যেন সমস্যায় না ফেলা হয়। ওই কথা শুনে রাভুবা বাঘেলা সহ বাকি কৃষকদের মন আনন্দে নেচে ওঠে। এক ঘণ্টার মধ্যে জমির আশাতীত মূল্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে রাবুভা সাংবাদিক বিনোদ জোসকে বলেন, গুজরাটিদের জমির সঙ্গে খুব বেশি আবেগ জড়িয়ে নেই, এখানেই গুজরাটিদের সঙ্গে অন্যদের তফাৎ। তারা হিসাব করে দেখে তাদের জমি বিক্রি পাশের জমির জন্য কতটা লাভজনক হবে। রাবুভা টাটা মোটর্সের জমির কাছে ৩০ একর জমি বেচার পরই, মোদীর অফিস থেকে ডাক পেলেন। তাঁদের সাক্ষাৎ পরেরদিন টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় খবরের হেডলাইন হলো-- ওয়েলদিয়েস্ট ম্যান ইন সানন্দ জাস্ট গট রিচার। সানন্দে ন্যানো ফ্যাক্টরির জন্য যে চুক্তি হয়েছিল তা পৃথিবীর নজর কেড়েছিল। ২০১০ সালের জুন মাসে কারখানা উদ্বোধনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফোর্ড ও পাশোট (peugeot) গুজরাটে কারখানা করবে বলে জমি চায়। জিআইডিসি তাদের প্রয়োজন মত মোট ২২০০ একর জমি জোগাড় করে দেয়। সঙ্গে টাটাকে যেমন আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছিল সেইরকম যথেচ্ছ সুবিধা। সেখানেও জমির মালিক বাজার মূল্যের দশগুণ অর্থ পেয়েছে। টাটা গুজরাটে আসার আগে এক একর জমির দাম ছিল ৩ লক্ষ টাকা, জিআইডিসি কৃষকদের দিয়েছে একর প্রতি ৩০ লক্ষ টাকা। জমি বিক্রেতারা সাতদিনের মধ্যে চেক পেয়েছে। মোদী এই অঞ্চলটিকে অটো হাবে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকও মেহসানা জেলার বেচারাজিতে কারখানা স্থাপন করেছে। বিপুল সরকারি ভর্তুকির বিনিময়ে হলেও সানন্দায় মোদীর সফলতার গল্প উন্নয়নের গুরু হিসাবে তাঁর সুনাম বাড়াল। তারপর থেকে সুযোগ পেলেই ভোটার বা ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে তিনি ওই উন্নয়নের কথা বলতেন। তবে গুজরাট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হলেও সব কলকারখানা কিন্তু মসৃণভাবে চলেনি। ন্যানো প্রকল্পটি যেখানে ছিল সেই সানন্দের নির্বাচকমণ্ডলী ২০১২ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত করে ন্যানো প্রকল্পের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিল। ভাইব্রেন্ট গুজরাটতবে মনে রাখতে হবে, ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হলেন তিনি উত্তরাধিকার সূত্রেই ভাইব্রেন্ট বা স্পন্দনশীল গুজরাট পেয়েছিলেন। ১৯৬০ সালে গুজরাট ১মে গুজরাট তৈরি হওয়ার পর থেকে দুই দশক (১৯৬০-১৯৮০) রাজ্যের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) ছিল ৪.৪ শতাংশ, যেখানে দেশের ছিল ৩.৩ শতাংশ। পরের দুই দশকে গুজরাটের অর্থনীতি বেড়েছিল ১৪.৫ শতাংশ হারে, যেখানে দেশের বৃদ্ধি ছিল ৫.৫ শতাংশ। গুজরাট তৈরি হওয়ার পর থেকে চার দশক ধরে রাজ্যটি দেশের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ছিল চালিকা শক্তি। এরপর ২০০২ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত জিডিপির বৃদ্ধি ছিল ৯.৫ শতাংশ এবং ২০১৪ থেকে ২০১৮ ছিল ৮.৬ শতাংশ। ওই দুই সময়কালে দেশের বৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৭.৫ ও ৬.৮ শতাংশ। মোদীর রাজ্যপাটের প্রায় পুরো সময় গুজরাটের জিডিপি বৃদ্ধি দেশের বৃদ্ধির চেয়ে বেশি ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে তা কিছুটা স্বাভাবিক, কারণ বহুকাল ধরেই গুজরাট শিল্পোন্নত রাজ্য। তবে মোদীর আমলে বৃদ্ধির হার আগের দুই দশকের চেয়ে মোটেই তেমন বেশি ছিল না। অথচ এমন ভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয় যেন ফরেন ডায়রেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) আনার ক্ষেত্রে গুজরাটই দেশকে নেতৃত্ব দেয়। এফডিআই-এর মাপকাঠিতে ২০০০ থেকে ২০০৯ সালে গুজরাট দেশের মধ্যে ছিল চতুর্থ, ২০১১ সালে ষষ্ঠ। ২০১১-তে মহারাষ্ট্রের এফডিআই ছিল গুজরাটের ন’গুণ বেশি।২০০৩ সাল থেকে মোদী প্রতি দু’বছর অন্তর ভাইব্রেন্ট গুজরাট গ্লোবাল সামিট চালু করেন। ভাইব্রেন্ট গুজরাট প্রকল্প বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য তৈরি করা হয়। নবরাত্রির সময় সেপ্টেম্বর মাসে সরকার সংগঠিত বিনিয়োগকারীদের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অসংখ্য দেশী-বিদেশী বাণিজ্য প্রতিনিধি সেখানে যোগ দিয়েছেন। সবাই জানত, ওই সম্মেলন ছিল গুজরাট দাঙ্গায় অভিযুক্ত মোদীর নতুন ইমেজ তৈরি করার করার উপায়, -- মোদীকে বিকাশ পুরুষ বা উন্নয়নের জন্য মাস্টার হিসাবে প্রমাণ করা। তিনি দাঙ্গার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ইমেজ মুছে ফেলার জন্য অক্লান্তভাবে চেষ্টা করেছেন। ওই সম্মেলন বিনিয়োগ টানার উদাহরণ হিসাবে পরিচিত হয়। ১২ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মোদী নিজেকে শিল্প-বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসাবে তুলে ধরেন। গুজরাটিদের উদ্যোগী প্রকৃতির স্বীকৃতি হিসাবে ‘ভাইব্রেন্ট গুজরাট’ কথাটা ব্যবহার করেছেন। প্রতিটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের সাথে প্রতিশ্রুতিগুলি আরও বড় হয়েছে। এই ধরনের অসামান্য সভা আয়োজন করার জন্য রাজকোষের খরচ বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে।viii ধীরে ধীরে মোদী শিল্পপতিদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। গুজরাটে বেশ কিছু বিনিয়োগের প্রস্তাব আসার সাথে সাথে, ২০০৯ থেকে শিল্পপতিদের একাংশ মোদীকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে স্বাগত জানাতে শুরু করে। ওদিকে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনের পর সরকার জানিয়েছিল যে, ১২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য ৩,৯৪৭টি সমঝোতা পত্র (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে ।ix ২০১১ সাল থেকে মোদী সক্রিয় ভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা শুরু করলে ভাইব্রেন্ট গুজরাট আরও বড় ঘটনা হয়ে ওঠে। শীর্ষ সম্মেলনের জন্য গান্ধীনগরে ‘মহাত্মা মন্দির’ নামে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পনেরো ১৫ মানুষ উপস্থিত থাকার ক্ষমতাসম্পন্ন কনভেনশন সেন্টার স্থাপন করা হয়। মোদী, তিনবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে, ভারতীয় জনতা পার্টিকে তাঁর উন্নয়নের ট্র্যাক রেকর্ড এবং বিপুল প্রচারিত ‘গুজরাট মডেল’x -এর ভিত্তিতে লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন।xi ২০১১ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে একশোটি দেশের দশ হাজার ব্যবসায়ী-শিল্পপতি পঞ্চম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে ৮,৩৮০টি সমঝোতা পত্র স্বাক্ষরিত হয়, ২০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের দাবি করা হয়। বলা হয় যে ওই বিনিয়োগ ৫২ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। কিন্তু সিএমআইআই-র (সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ইন্সট্রাকশনাল ইনোভেশন, ইয়েল) গবেষণায় ওইসব সমঝোতা পত্র এবং প্রকল্পের বিবরণ পাওয়া যায়নি। তারা জানায়, প্রাথমিক তথ্যের অভাবে আগের শীর্ষ সম্মেলনের মতো এক্ষেত্রেও প্রকল্পগুলি পৃথক করে শনাক্ত করার জন্য কোম্পানির নাম, অবস্থান, পণ্য ইত্যাদির বিশদ বিবরণ স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়নি।২০০৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত যে পাঁচটি সম্মেলন হয়েছে তাতে ৪০ লক্ষ কোটি টাকার মৌ (মেমোর‍্যান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে প্রচার করা হয়েছিল, তবে বাস্তবে বিনিয়োগ হয়েছে তার শতকরা ২৫ ভাগের কম। ২০০৩ সালে যতগুলো মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে তার ৭৩ শতাংশ প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে বা রূপায়নের কাজ চলছিল। ২০১১ সালে সেই ভাগ ছিল ১৩ শতাংশ। দশের দশকের শেষ ভাগ থেকে গুজরাটে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি দুইই কমেছে। কারণ বিনিয়োগের পর কতটা লাভ হতে পারে তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সন্দিহান ছিলেন।গুজরাট সরকারের ডায়রেক্টরেট অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স প্রকাশিত গুজরাটের আর্থ-সামাজিক রিপোর্ট (২০১৭-২০১৮) অনুসারে, ভাইব্রেন্ট গুজরাট গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিট থেকে উদ্ভূত প্রতি এক কোটি টাকার বিনিয়োগে চারজনের জন্য চাকরি হয়েছে। ২০০৩ সালে থেকে ২০১৭ পর্যন্ত, ৭৬,৫১২টি প্রকল্পের জন্য মৌ স্বাক্ষর করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত গৃহীত প্রকল্পগুলি থেকে মোট প্রায় ১৭ লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬,২৫১টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছিল, যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২,৭৫,৮৮০ কোটি টাকা। ৪,২৮০টি প্রকল্পের কাজ তখনও চলছিল, যা শেষ হলে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ৯,৯৬,৪৫৮ কোটি টাকা।xii আমেদাবাদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ধোলেরাতে শিল্প শহর গঠনের কথা আগেই বলা হয়েছিল। গুজরাট স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট রিজিয়ন অ্যাক্ট ২০০৯, কার্যকর হওয়ার পর ধোলেরা স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট রিজিয়ন (এসআইআর) প্রকল্পের জন্য ২০০৯ সালের ভাইব্রেন্ট গুজরাট সামিটে মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। দশ বছর পরে, ২০১৯ সালের সম্মেলনে যখন গুজরাট সরকার ধোলেরা এসআইআর-কে বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসাবে দেখায়, বাস্তবে ২০০৯ সালে স্বাক্ষরিত বেশিরভাগ প্রকল্পই তখনও চালু হয়নি। ধোলেরা এসআইআর-এর জন্য ঘোষিত প্রকল্পগুলির মধ্যে ছিল একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আমেদাবাদ শহরের সাথে ধোলেরা সংযোগকারী এক্সপ্রেসওয়ে এবং একটি ৫০০০-মেগাওয়াট সোলার পার্ক৷ এছাড়া ২০১১ ভাইব্রেন্ট গুজরাট সামিটে স্বাক্ষরিত অনাবাসী ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রসূন মুখার্জির ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজের টাউনশিপ, একটি ১০,০০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, একটি বন্দর। ধোলেরার কাছে ওয়াটার সিটির জন্য হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ৪০,০০০ কোটি টাকার সমঝোতার কাজ কিছুই এগোয়নি। ১১,০০০ কোটি টাকার জিন্দাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, প্রায় ১১,৫০০ টাকার গুজরাট ভিট্টাল ইনোভেশন সিটির কাজ শুরুই হয়নি। এসআইআর প্রকল্পগুলির জন্য ৮০,০০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব ২০১৯ সালেও অচল অবস্থায় ছিল। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির (সিএমআইই) তথ্য দেখায় যে, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, গুজরাটে এই ধরনের বিনিয়োগকারী সম্মেলনগুলিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতির মাত্র ২৫ শতাংশ দিনের আলো দেখেছিল৷ অনেক বিজেপি শাসিত রাজ্য একে মডেল হিসাবে গ্রহণ করেছে। যেমন -- হ্যাপেনিং হরিয়ানা, মোমেন্টাম ঝাড়খণ্ড, রিসার্জেন্ট রাজস্থান ইত্যাদি। উত্তরপ্রদেশ (ইউপি ইনভেস্টর সামিট), পশ্চিমবঙ্গ (বেঙ্গল গ্লোবাল সামিট), ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশাও বিনিয়োগের উপযুক্ত গন্তব্য হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য ভাইব্রেন্ট গুজরাট সামিটের অনুরূপ সংস্করণ আয়োজন করেছে। কিন্তু সব জায়গাতেই একই কান্ড– বড় বড় ঘোষণার কিছুকাল পর দেখানোর মতো কিছু নেই। ইভেন্টের সময় যে মৌ (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়, খুব কমই প্রকৃত বিনিয়োগ হয়, কারণ মৌগুলির কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এই জাতীয় শোগুলির পর বলার মতো কর্মসংস্থান যে হয় এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যও নেই। অনেক বিশেষজ্ঞই বলেন, মোদীর শাসনে গুজরাটে উন্নয়নের ধারণা ভুল। ২০১২ সালে ইকোনমিক টাইমসের বিনয় প্রভাকর ও মিতুল ঠক্করকে আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের (আইআইএমএ) অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন্দ্র ত্রিপাঠী বলেছিলেনঃ ঐতিহাসিকভাবে গুজরাট তার ১,৬০০ কিলোমিটার উপকূলরেখার জন্য সুবিধা ভোগ করেছে, গুজরাটের মাটিও অর্থকরী ফসলের জন্য ভাল। সুরাত ছিল ভারতের প্রথম বড় বন্দরগুলির অন্যতম। ওদিকে প্রাক-স্বাধীন যুগে মুম্বাইয়ের পরে আহমেদাবাদেই একটি টেক্সটাইল মিল চালু হয়েছিল। প্রতিটি গুজরাটির রক্তে উদ্যোক্তা এবং ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু আজকাল গুজরাটের কথা বলার সময় এই দিকটি বাদ দেওয়া হয়। অতীতেও রাজ্যটি দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় উচ্চতর বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষত উত্পাদনে। গুজরাটের বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে বেশ ভালো, কিন্তু অলৌকিক নয়। অন্যান্য রাজ্য গুজরাটকে কিছু ক্ষেত্রে ছাড়িয়েও যেতে পারে। যেমন, বিহার, দিল্লি এবং পুদুচেরি হল দেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল রাজ্য এবং গুজরাট পরপর দ্বিতীয় বছরের জন্য শীর্ষ পাঁচে স্থান পায়নি।অনেক সমালোচক মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে গুজরাটের উন্নয়নকে অতিরঞ্জিত করার জন্য অভিযুক্ত করে বলেন যে, বাস্তবে গুজরাটের বৃদ্ধির হার অর্থনৈতিকভাবে উন্নত মহারাষ্ট্রের মতো। তাঁরা আরও বলেন যে, গুজরাট ঐতিহাসিক সুবিধাগুলি থেকে উপকৃত হয়েছে -- একটি উদ্যোক্তা শ্রেণী, অপেক্ষাকৃত ভাল পরিকাঠামো এবং একটি বিস্তৃত উপকূলরেখা। মোদীর নেতৃত্বে থাকুক বা না থাকুক তা বেড়ে উঠত। দক্ষ প্রচারের সাহায্যে মোদী নিজেকে প্রাণবন্ত গুজরাটের মুখ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। শক্তিশালী মিডিয়া এবং বিজ্ঞাপন জগতের মহাশক্তিশালী ‘অ্যাপকো ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ মোদী ও তাঁর সাফল্যের কথা পৃথিবীময় প্রচার করেছে (কয়েকটি দেশের ডিক্টেটর-সহ বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারী কোম্পানি যাদের ক্লায়েন্ট)। আদিত্য নিগম এবং বিনয় প্রভাকর তাদের প্রবন্ধে জানিয়েছেন, যে কর্তৃত্ববাদী আচরণে ‘গুজরাটের উন্নয়ন’ সম্ভব হয়েছে তা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং নিচু জাতির বিরুদ্ধে আজ দেশব্যাপী যে ফ্যাসিবাদী হিংসা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে তা থেকে আলাদা নয়। নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে যে কর্পোরেটমুখী, বিনিয়োগ-বন্ধু শাসন শুরু হয়েছিল তা কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দৃঢ় করেছে এবং অসাম্য মেনে নেওয়ার বাতাবরণ তৈরি করেছে। কাফিলায় শিপ্রা নিগমের প্রবন্ধ এবং অতুল সুদ সম্পাদিত গবেষণা পত্রের সংকলন (পভার্টি অ্যামিডস্ট প্রস্পারিটিঃ এসেস অন দ্য ট্রাজেক্টরি অফ ডেভেলপমেন্ট ইন গুজরাট) থেকে জানা যায়, গুজরাটের ২০০৯ সালের শিল্পনীতি অনুযায়ী কেন্দ্রের দিল্লী-মুম্বাই ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল করিডোর (ডিএমআইসি) তৈরি করতে উপকূলের কাছাকাছি অঞ্চল ও ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগানো হয়। ডিএমআইসি পরিকল্পনায় ধার, পুনে, অলওয়ার, সুরাট, রেওয়ারি, মুজফফরনগরের গ্রিনফিল্ড অঞ্চলে শিল্প ও পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। যেখানে প্রয়োজন সেই গ্রিনফিল্ড অঞ্চলের পরিকাঠামো মজবুত না করে অন্যত্র উন্নয়নের এনক্লেভ তৈরি করা হয়েছে। জনবসতিকে অবজ্ঞা করার জন্য মানুষ ও পরিবেশের উপর তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। যেমন, ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে ডিএমআইসি পরিকল্পনা থেকে বোঝা যায় রাজ্যে কৃষি ও গৃহস্থালির কাজে জলের ব্যবহার কমিয়ে শিল্পের কাজে দেওয়া হবে। পরিকল্পনায় কোথাও বলা হয়নি যে কিভাবে জল বণ্টন করা হবে, শহরে জলের বিপুল চাহিদা কিভাবে মিটবে, কে তার মূল্য দেবে। অর্থনীতির গবেষক ইন্দিরা হিরোয়ে জানিয়েছেন, গুজরাট মডেলে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন-- রাস্তা, বিমানবন্দর, এবং ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া সরকার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কর্পোরেট সেক্টরের বিনিয়োগে ইনসেন্টিভ এবং ভর্তুকি অভূতপূর্ব ভাবে বাড়িয়েছিল। সেই কারণে সাধারণ মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং কর্মসংস্থানের বাজেট সীমিত হয়ে গিয়েছিল। কর্পোরেট বিনিয়োগের ইনসেন্টিভের মধ্যে প্রধানত ২০০৬-০৭ পর্যন্ত ছিল বিক্রয় কর ভর্তুকি (কেন্দ্র তা নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত)। বিক্রয় কর থেকে রাজস্বের (যা রাজ্য সরকারে আয়ের প্রধান উত্স) চল্লিশ শতাংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল। এরপর, সরকার মূলধন, সুদ, পরিকাঠামোতে ভর্তুকি দেওয়ার পাশাপাশি জমি, জল সরবরাহ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপরও অনেক ভর্তুকি চালু করে (যেমন, টাটা-ন্যানো মোট প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি পেয়েছে)। সরকার গোচারণ ভূমি, ডিনোটিফাইড সংরক্ষিত এলাকা, জাতীয় উদ্যান এবং সেচযুক্ত উর্বর জমিও অধিগ্রহণ করেছিল। শিল্পপতিদের একর প্রতি ১ টাকা মূল্যেও জমি দেওয়া হয়েছিল (আদানির ক্ষেত্রে জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে হেক্টর প্রতি ওই মূল্যে)। গুজরাট মডেলের শেষ বছরগুলিতে জমির দাম বেশি নেওয়া হলেও বাজার মূল্যের চেয়ে কম ছিল।২০১২ সালের ২ অক্টোবর গুজরাট বিধানসভায় পেশ করা কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আইন ভেঙ্গে কর্পোরেট কোম্পানিকে অনুচিত সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজকোষের ৫৮০ কোটি টাকা ক্ষতিতে মোদী সরকার এবং রাজ্যের পাবলিক সেক্টর উদ্যোগ দায়ী। সিএজি জানিয়েছে, যারা সেই সুবিধা পেয়েছে সেই রকম বড় কোম্পানি হল—রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড (আরআইএল), এসার স্টিল ক্যারিবিয়ান লিমিটেড (ইএসসিএল) এবং আদানি পাওয়ার লিমিটেড (এপিএল)। আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সরকার গাড়ি প্রস্তুতকারক ফোর্ড ইন্ডিয়া এবং লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোকে জমি দিয়েও রাজস্বের ক্ষতি করেছে। অভিযোগ ওঠে, মোদী সরকারের সঙ্গে কর্পোরেট হাউসের অশুভ আঁতাত আছে বলেই কর্পোরেটরা অনুচিত সুবিধার বিনিময়ে মোদী সরকারের প্রশংসা করে। গুজরাটে বিনিয়োগকারীরা শুধু সম্পদই জোগায়নি, উন্নয়নে কোন বিষয় জোড় পাবে তাও ঠিক করেছে। উন্নয়নের জন্য কোন কাজ গুরুত্ব পাওয়া দরকার তা সরকার বা অর্থনীতিবিদদের কোনও পরিকল্পনাকারী কমিটি ঠিক করেনি। ঠিক করেছে বিনিয়োগকারী, আর্থিক সংস্থা এবং কর্পোরেট ফার্ম। এক কথায় গুজরাটের অর্থনীতি কর্পোরেটদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বিনিয়োগ করে, তারাই ওই উন্নয়ন মডেলের প্রশংসা করে। এই কারণেই তা কতটা টেকসই এবং আদৌ ঠিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সব ক্ষেত্রেই বেসরকারি শিল্পপতিদের আকর্ষণ করার জন্য তাঁদের বিপুল ছাড়, ভর্তুকি, এমনকি সরাসরি আয় এবং রাজস্ব নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্রকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল্য ও শুল্ক নির্ধারণ করার মতো আইন পরিবর্তন করে নানা সুবিধা দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ এসেছে। তবে ২০১১ সাল পর্যন্ত যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে তার বেশিটাই এসেছে বেসরকারি শিল্পে ক্যাপ্টিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের দৌলতে। বিদ্যুতের ট্যারিফ কাঠামো কৃষি ক্ষেত্রের চেয়ে বাণিজ্য ও শিল্পে সুবিধা দেয় বেশি (জাতীয় গড়ের তুলনায়)। আগে যে সমস্ত মূল সেক্টরগুলো সরকারের হাতে থাকতো— বন্দর, রাস্তা, রেল, বিদ্যুৎ-- সবই কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওইসব প্রকল্পে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ সরকার ছেড়ে দিয়েছে। আর কোনও রাজ্যের অর্থনীতি এইভাবে পুরোপুরি কর্পোরেট ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। বেসরকারি বিনিয়োগকারীর জন্য জমি জোগাড় করে দিয়ে মুনাফার জন্য দু-তিন দশক ধরে সব কিছুতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যেমন, বন্দর উন্নয়নের বুট নীতি (বিল্ড ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার) অনুযায়ী ডেভেলপারকে রয়্যালটি দিতেই হবে না। তারাই নানান চার্জ এবং টোল ঠিক করবে। সরকার বিনিয়োগকারীদের কর প্রক্রিয়া ও শুল্কে অনেক ছাড় দিয়েছে। সরকারের ভূমিকা খর্ব করে ন্যূনতম করা হয়েছে। এই কারণেই বন্দর উন্নয়নে গুজরাটে যে বিনিয়োগ এসেছে তা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। একই ভাবে রাস্তা ও রেল তৈরির ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) কাজ হয়েছে। যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য রাজ্যের সিংহভাগ বিনিয়োগই হয়েছে নতুন বন্দর, স্পেশাল ইকনোমিক জোন (এসইজেড), স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট রিজিওনের (এসআইআর) সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে। পরিকাঠামোয় বেসরকারি বিনিয়োগ যেন কেবলমাত্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোরের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য। রাস্তা ও রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যও এসইজেড এবং বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। স্থানীয় মানুষের তাতে কতটা সুবিধা হবে বলা মুশকিল। একইভাবে ৬৩০ কিলোমিটার রেল ন্যারো গেজ থেকে ব্রড গেজ করতে যে খরচ হয়েছে তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বন্দরের যোগাযোগ উন্নত করা, বসতি বা লোকালয়ের নয়। মানুষের বসতি অঞ্চলের যোগাযোগ বাড়ানোর কাজ যেটুকু হয়েছে, সে টাকা এসেছে কেন্দ্রের কাছ থেকে (পিএমজিএসওয়াই)। ২০১১ সালের ইকনোমিক সার্ভেতে শ্রমিক অসন্তোষের বিচারে গুজরাটের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিল। অথচ একই সময় বাকি দেশে তা কমেছে। স্ট্রাইক, লকআউট ও অন্যান্য নানা ধরণের অসন্তোষ সবচেয়ে বেশি ছিল বলে মারুতি কি টাটা-- বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতিরা তাদের উৎপাদন কেন্দ্র ও কাজকর্ম গুজরাটের অন্যত্র সরিয়ে নিতে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। সেই অবস্থায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে, মোদী সরকারের আইনের রাজত্ব স্থাপনের উপর শিল্পের ক্রমবর্ধমান আস্থা মোদী শাসনব্যবস্থার সর্বগ্রাসী চেহারার কথা বলে।জনসংযোগের সুপরিকল্পিত প্রচারে মোদীকে অর্থনীতির অলৌকিক অগ্রগতির নায়ক হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। মিথ্যা ইমেজ তৈরি করা হয়েছে। গুজরাট সরকার স্পেশাল ইকনোমিক জোন, স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট রিজিয়ন ও প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের জন্য জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে কৃষকদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ পুলিশ দিয়ে দমন করেছে, মিথ্যা ফৌজদারি মামলা করেছে। পুলিশ, বনদপ্তর ও রাজস্ব বিভাগকে কাজে লাগিয়ে জোর করে গুজরাটের বিরোধী দল, সমাজকর্মী, ট্রেড ইউনিয়ন লিডার, শিক্ষাবিদ, সংখ্যালঘু, দলিত ও আদিবাসীদের কণ্ঠরোধ করেছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যে গণতান্ত্রিক সুযোগ আছে বিধানসভার সেশনের সময় কমিয়ে দিয়ে সরকারি দল তাও সঙ্কুচিত করেছিল। এছাড়া বিরোধী বিধায়কদের সামান্য ছুতোয় সাসপেন্ড করে, বিধানসভায় শেষ মুহূর্তে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) রিপোর্ট পেশ করে তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ না দিয়ে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করেছিল। আজ দেশের উন্নতি নিয়ে যে ঢাক পেটানো হচ্ছে, সাম্প্রতিক অতীতে ‘গুজরাট মডেল’ নিয়ে একই ভাবে বুক বাজানো হয়েছে। শুধু দেশেই নয়, অনেক অর্থের বিনিময়ে মার্কিন লবিং কোম্পানি বিশ্ব জুড়ে সেই প্রচার করেছে। শেষে অর্থনীতির বহু গবেষক ও সাংবাদিক মোদীর রাজত্বে গুজরাটের অগ্রগতি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে অজস্র লেখা ও গবেষণাপত্রে আসল চিত্র প্রকাশ করার পর গুজরাট মডেলের নিয়ে কথা বন্ধ হয়েছে, বোঝা গেছে তা কোনও অনুকরণযোগ্য মডেলই নয়।প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুরেশ মেহতার বক্তব্যগুজরাতের পাঁচ বারের বিধায়ক ও প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী (২১ অক্টোবর ১৯৯৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) সুরেশ মেহতার রাজনৈতিক কর্মজীবন ২০০২ সালে শেষ হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও তিনি রাজ্যের অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করে তিনি বিজেপি দল ছেড়ে দেন। ২০০১৭ সালের অক্টোবর মাসে দ্য ওয়্যারের অজয় আশীর্বাদ মহাপ্রশস্তকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এক দশক ধরে গুজরাট সরকারের ব্যর্থতার কথা বলেছেন। গুজরাট মডেল নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন যে, তা শুধু ধনীদের সেবায় কাজে লাগে। গুজরাট মডেল কথার ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়, গুজরাটের কঠিন বাস্তব অন্য কথা বলে। সরকার রাজ্যটিকে ক্রমাগত ঋণের ফাঁদের দিকে ঠেলে দিয়েছে৷ তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে সিএজি (কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল) গুজরাটের আর্থিক সংস্থান পরীক্ষা করে। সেই সময়ে, রাজ্যের ঋণ ছিল ৪,০০০ থেকে ৬,০০০ কোটি টাকার মধ্যে। তাই গুজরাটকে স্থায়ীভাবে ঋণের ফাঁদে আটকে পড়া রাজ্যে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য সিএজি কিছু আর্থিক শৃঙ্খলা মানার জন্য সতর্ক করেছিল। সরকার সিএজির পর্যবেক্ষণ উপেক্ষা করে।xiii সিএজি বলে, সরকারের ঘোষণা অনুসারে, ৩১ মার্চ, ২০১৬ পর্যন্ত ২৫,৮৬৬.৭৮ কোটি টাকার কর (ট্যাক্স রেভিনিউ) উত্থাপিত হলেও আদায় হয়নি। তার আগের বছরে এই অংক ছিল প্রায় ১৮,০০০ কোটি টাকা। প্রতি বছর, এই অংক প্রায় ৭-৮ হাজার কোটি বৃদ্ধি পায়। তাই রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বকেয়া কর সংগ্রহ করতে বাধা কোথায়? এটি সরকারের দুর্নীতির ইঙ্গিতও হতে পারে।সুরেশ মেহতা বলেন, গুজরাট সরকারের অগ্রাধিকার কোথায় রয়েছে খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়। ২০০৬-০৭ সাল থেকে কৃষি ভর্তুকি (যা থেকে কৃষকরা উপকৃত হন) ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে তা ছিল ১৯৫ কোটি টাকা, ২০০৭-০৮ সালে বেড়ে হয়েছিল ৪০৮ কোটি, ২০১৬-১৭ সালে তা কমে হয় ৮০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আদানি ও আম্বানি পরিচালিত শক্তি এবং পেট্রোকেমিক্যাল সেক্টরে দেওয়া ভর্তুকির সাথে এর তুলনা করলে অবাক লাগবে। ২০০৬-০৭ সালে এই ভর্তুকি ছিল ১,৮৭৩ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ সালে তা বেড়ে ৪,৪৭১ কোটি টাকা। অথচ দরিদ্র মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নাগরিক সরবরাহের ব্যয় একই সময়কালে ১৩০ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। তিনি জানান, গুজরাটের নির্বাচনের বছরে, ২০০৭ সালে, মোদী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার উন্নতির ঘোষিত উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক ধুমধাম করে বনবন্ধু কল্যাণ যোজনা চালু করেছিলেন। তিনি এই স্কিমের জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন, যা 'হর এক কো ঘর, হর এক কো স্বাস্থ্য' (সবার জন্য ঘর, সবার জন্য স্বাস্থ্য) দিয়ে শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি, তিনি আদিবাসীদের জন্য পাঁচ লক্ষ দক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় পাকা রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সরকারের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, তার ৫ শতাংশও অর্জিত হয়নি। একইভাবে, ২০০৭ সালের ৬ জুলাই, মোদি উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ‘সাগর খেদু সর্বাঙ্গী বিকাশ যোজনা’ নামে আরেকটি প্রকল্প চালু করেছিলেন। রাজ্যের উপকূলীয় বেল্টের ১,৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৩০০টি গ্রাম এবং ৩৮টি তালুকে বাস করা ৬০ লক্ষ লোকের জন্য ১১,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। মোদি বলেছিলেন যে, উপকূলীয় অঞ্চলের শিশুরা খুবই প্রতিভাবান, তাই তাদের প্রশিক্ষণের জন্য তিনি একটি কলেজ খুলবেন, যেন তাদের ভারতীয় নৌবাহিনীতে নিয়োগ করা যায়। ২০১২ সালের ২১ মার্চ সরকার পক্ষ বিধানসভায় এক প্রশ্নের উত্তর জানায় যে, উপকূলীয় অঞ্চল থেকে একটি শিশুকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং নৌবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়নি। মোদি বলেছিলেন যে উপকূলের ৩০০টি গ্রামের প্রতিটিতে নোনা জলের সমস্যা মোকাবিলা করতে একটি করে আরও প্ল্যান্ট বসানো হবে। কিন্তু একটি গ্রামেও সেই প্ল্যান্ট বসেনি। তাঁর প্রশ্ন, কিন্তু ওই প্রকল্পের অত টাকা গেল কোথায়? মোদি ঘোষণা করেছিলেন যে, স্ট্যাচু অফ ইউনিটি (সর্দার সরোবর বাঁধে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি) বিশ্বের বৃহত্তম মূর্তি হবে। এও বলেছিলেন যে, এর জন্য সরকারি কোষাগারের বোঝা বাড়বে না। তিনি বলেছিলেন, তিনি জনগণের কাছ থেকে তহবিল তুলবেন। কিছুটা টাকা ওঠার পর ওই তহবিল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গুজরাটের অর্থমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন যে, ওই মূর্তি তৈরি করতে তিন বছরে নর্মদা প্রকল্পের তহবিল থেকে ৩,০০০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, সরকার কীভাবে সেচ ও কৃষকদের খাতের টাকা মূর্ত্তি তৈরির জন্য বরাদ্দ করে?গুজরাটে যক্ষার প্রকোপঅর্থনীতিবিদ মৈত্রীশ ঘটক লিখেছেন, গুজরাট হল কর্পোরেট নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন মডেলের এক চিরায়ত উদাহরণ যেখানে ধনীদের সমৃদ্ধি বাড়ে কিন্তু ব্যাপক জনসাধারণের খুব একটা উন্নতি হয় না। জঁ দ্রেজা বলেছিলেন, গুজরাটের চারপাশে ঘুরে বেরালে ভাল রাস্তা, অসংখ্য কলকারখানা এবং নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ যে কারো চোখে পড়তে বাধ্য। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার হাল কী? কিরণ কুম্ভর ২০১৭ সালে দ্য ওয়্যার-এ লিখেছেন, ভারত সরকারের টিবি (যক্ষ্মা) পরিসংখ্যান দেখায় যে, সাধারণ গুজরাটিদের জীবনযাত্রার হাল সবসময়ই ‘মডেল’ থেকে দূরে ছিল, গত দশকে তা আরও খারাপ হয়েছে। অনেকের মনে হতে পারে জীবনযাত্রার মান বোঝার জন্য টিবি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? আসলে এই রোগটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণগুলির সাথে এতটাই জড়িত যে টিবির সফল নিয়ন্ত্রণকে একটি অঞ্চলের সামগ্রিক অগ্রগতির পরিমাপ হিসাবে ধরে নেওয়া যায়। নানা রোগের মধ্যে, টিবি রোগটিই সম্ভবত একটি অঞ্চলের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির সবচেয়ে সঠিক প্রতিনিধিত্বকারী সূচক বা পরোক্ষ সূচক (প্রক্সি সূচক), যেখানে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিকব্যবস্থা দুইই প্রতিফলিত হয়। টিবির হার যেখানে বেশি তা দুর্বল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অবহেলিত শাসনের প্রমাণ। কোনও জাতি বা রাজ্য কতটা উন্নত এবং স্থিতিশীল বুঝতে হলে তাদের টিবি সংখ্যার দিকে তাকালেই চলে। তিনি জানান, ২০১৭ সালে ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু ‘ইন্ডিয়া স্টেট-লেভেল ডিজিস বারডেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। ওই বিস্তৃত প্রতিবেদনটি ভারতের মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের সহযোগিতায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর), পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া (পিএইচএফআই) এবং ইউএস-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (আইএইচএমই)-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে। পরিসংখ্যানগুলি গত পচিশ বছরে ভারতের সমস্ত শনাক্তযোগ্য মহামারী সংক্রান্ত তথ্যের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পাওয়া। ওই রিপোর্ট গুজরাটের অনুন্নয়ন এবং খারাপ জনস্বাস্থ্যের অস্বস্তিকর ছবি এঁকেছে। ভারতে প্রতি বছর যক্ষ্মায় আক্রান্ত মানুষের পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাট রয়েছে এক নম্বরে। ১০১৬ সালে প্রতি এক লক্ষ গুজরাটির মধ্যে টিবি হয়েছে ৩৫৬ জনের। শুধুমাত্র ওই রাজ্যেই প্রায় ২,৪০,০০ মানুষের যক্ষ্মা ধরা পড়েছে৷ অর্থাৎ, প্রতি ঘন্টায় ২৫ জন গুজরাটি টিবি রোগে আক্রান্ত হয়। কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গের সাথে তুলনা করলে (বিজেপি যে দুটি রাজ্যকে আইনহীন এবং অনুন্নত বলে) দেখা যায়, ওই বছর পশ্চিমবঙ্গে যক্ষ্মা হয়েছিল ১৩৯ জনের এবং কেরালায় ৫৯ জনের। টিবি নিয়ন্ত্রণে গুজরাট এতটাই ব্যর্থ যে উত্তরপ্রদেশ ছাড়া একমাত্র ওই রাজ্যেই এক দশকে টিবির প্রকোপ প্রবল বেড়েছে। প্রতি এক লাখ মানুষের যক্ষ্মায় মৃত্যুর অনুপাতে গুজরাট আসামের সাথে রয়েছে ৩ নম্বরে। ২০১৬ সালে প্রতি এক লাখ গুজরাটির মধ্যে ৪২ জন টিবিতে মারা গেলেও, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালার ক্ষেত্রে ওই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৯ এবং ৮। এক দশক আগেও গুজরাট এবং মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ুর মতো বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পার্থক্য তেমন বেশি ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯০ সালে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে টিবিতে মৃত্যুর সংখ্যা ওই তিনটি রাজ্যে ছিল ৮০ থেকে ৯০-এর মধ্যে। মোদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার এক বছর পর, ২০০২ সালে গুজরাটে ওই সংখ্যা ছিল ৬২, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুতে যথাক্রমে ৫১ এবং ৪৩। সম্প্রতি তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্র দুই রাজ্যেই যক্ষ্মাজনিত মৃত্যু প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে, মোদীর গুজরাট মডেলে কমেছে মাত্র ৩২ শতাংশ (তিনটি রাজ্যের পরিসংখ্যান যথাক্রমে ২৪, ২৪ এবং ৪২)। গত এক দশক ধরে উত্তরপ্রদেশ ছাড়া গুজরাটেই টিবি-র প্রকোপ বেশি। গুজরাটের বাস্তবমোদীর শাসন সম্পর্কে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে অমর্ত্য সেনও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে গুজরাত উন্নয়নের মডেল সম্পর্কে বলেছিলেন, সামাজিক দিকে ওই মডেলের দুর্বলতা রয়েছে, তাই তাকে সফল বলা যায় না। অথচ বছরের পর বছর ধরে আমরা শুনে আসছি, গুজরাট মডেল হল অর্থনৈতিক উন্নয়নের অতুলনীয় উদাহরণ।নানা গবেষণায় দেখা গেছে যে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ে গুজরাট দেশের মধ্যে উঁচুতে থাকলেও সামাজিক সূচকে নীচুতে ছিল। তাই গুজরাত মডেল ব্যাপক মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনেনি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী আর্থিক উন্নয়নে গুজরাট মডেলের ঢাক পিটিয়েছেন, দ্বিতীয়বার ২০১৯ সালে কিন্তু তা করেননি। কারণ, ততদিনে ভাইব্রেন্ট গুজরাট যে আসলে জুমলা তা নিয়ে অর্থনীতির গবেষক ও সাংবাদিকদের অনেক আলোচনা প্রকাশ্যে এসেছে। কেউ কেউ বলেছেন, গুজরাট শুধু স্থবিরই নয়, সে রাজ্যের পশ্চাদ্গতি শুরু হয়েছে। ২০০৬-০৭ থেকে ২০১০-১১-র মধ্যে, এমনকি উড়িষ্যা, বিহার, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যগুলির বৃদ্ধির হারও উঁচু ছিল। তাই গুজরাটের ৯.৩ শতাংশ বৃদ্ধি উঁচু হলেও চোখ ধাঁধানো ছিল না। সমৃদ্ধির আখ্যানের আড়ালে জানা গেছে যে, অনেক সামাজিক সূচকেই গুজরাটের অবস্থান খারাপ। পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ৭০ শতাংশ ভুগছে রক্তাল্পতায়। পরিকল্পনা কমিশন (কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর লুপ্ত) প্রকাশিত ২০১১ সালের ইন্ডিয়া হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অনুসারে, মানব উন্নয়ন সূচকে গুজরাট দেশের মধ্যে ১১তম স্থানে রয়েছে। ওই সূচকে ১৯৯৬ সালে ছিল পঞ্চম স্থানে। ২০০৬ সালে ছিল নবম স্থানে, ২০১৭ সালে ফের ১১তম। গুজরাটে পাঁচ বছরের নীচে ৪৭ শতাংশ শিশু, ২৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, ৬৩ শতাংশ মহিলা অপুষ্টিতে ভোগে, যা উত্তরপ্রদেশের অবস্থার চেয়েও খারাপ। প্রসবের সময় মাতৃমৃত্যুর হার বেড়েছে। ২০১৪ সালে প্ল্যানিং কমিশনের (ভেঙ্গে দেওয়ার আগে) তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি স্বত্বেও দারিদ্র মোচনে গুজরাট ছিল বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের পিছনে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের রিপোর্ট অনুসারে, গুজরাট ক্ষুধার সূচকে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। রাজ্যের মাত্র ৪৩ শতাংশ শিশুর ওজন স্বাভাবিক।কর্পোরেটদের বিপুল পরিমান প্রণোদনা (ইনসেন্টিভ) দেওয়ার পরে, সাধারণ মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং কর্মসংস্থানের জন্য গুজরাট সরকারের তহবিল সীমিত হয়ে যায়। গুজরাট তার আয়ের ২ শতাংশের কম শিক্ষায় ব্যয় করে (আদর্শ ৫-৬ শতাংশ)। এর ফলে রাজ্যে শিক্ষার মান খারাপ। রাজ্যের ৪৫ শতাংশ কর্মী নিরক্ষর বা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। উচ্চশিক্ষার মানও খারাপ বলে বেকার ইঞ্জিনীয়ার এবং বিজ্ঞান স্নাতকের সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় রাজ্যের আয়ের ০.৮ শতাংশ (আদর্শ ৪-৬ শতাংশ)। প্রায় সমস্ত স্বাস্থ্য সূচকে গুজরাট দ্রুত নেমেছে। আজ কারো কারো পছন্দের মেডিক্যাল টুরিজিম-এর গন্তব্য গুজরাট। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮-র মধ্যে আমেদাবাদে ২০০টি প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। তবে ওই সময়কালে সরকারি হাসপাতালের বেড বেড়েছে মাত্র ২০০টি, চিকিৎসা সহায়কের অভাবের কথা বাদ দিলেও সরকারি ডাক্তারের ঘাটতিই হল ১২ হাজার। শিক্ষা ব্যবস্থার হালও একই রকম। প্রতি ১০০ জন প্রথম শ্রেনীর পড়ুয়ার মধ্যে কলেজ পর্যন্ত যায় ২০ জন। মোদীর বহু প্রচারিত উজ্জ্বলা যোজনা অনুযায়ী দাবি করা হয়, মাটির ঘরে জ্বালানি হিসাবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ করে মানুষ গ্যাস ব্যবহার করছে। অসরকারি সংগঠন ‘দিশা’ উত্তর ও পূর্ব গুজরাটের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলায় ১০৮০টি ঘরে সমীক্ষা করে দেখেছে ৯৫৩টি ঘরই দ্বিতীয় গ্যাস সিলিন্ডার না কিনে জ্বালানি হিসাবে কাঠের ব্যবহারে ফিরে গেছে। বিপদ হল গ্যাস ব্যবহারকারী হিসাবে নাম ওঠায় তারা রেশন দোকান থেকে কম দামে কেরোসিন তেল পায় না। অতুল সুদ সম্পাদিত ‘পভার্টি অ্যামিডস্ট প্রস্পারিটিঃ এসেস অন দ্য ট্রাজেক্টরি অফ ডেভেলপমেন্ট ইন গুজরাট’ বইটিতে রুচিকা রাণী এবং কালাইয়ারাসান তাদের গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে গুজরাটে উল্লেখযোগ্য উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও উৎপাদন ও পরিষেবায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ছিল ঋনাত্বক। ওদিকে ২০০৩ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যেটুকু কর্মসংস্থান বেড়েছে বেশিটাই ঠিকা শ্রমিক এবং স্বনিযুক্তিতে। উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রে উঁচু জাতের হিন্দু এবং কম অনুপাতে তফশীলি জাতির (এসসি) নিয়মিত কর্মসংস্থানে হয়েছে। তফশীলি জাতির কর্মসংস্থান বেড়েছে ঠিকা কর্মী হিসাবে। ওবিসি, মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুরা পরম্পরাগত কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ফাঁক ভরিয়েছে। অর্থাৎ গুজরাটে বৃদ্ধি হচ্ছে শিল্প ক্ষেত্রে, কর্মসংস্থান বাড়ছে কৃষিক্ষেত্রে। বলা যায়, কৃষিক্ষেত্রে দুর্দশার অভিবাসন হচ্ছে। অর্থাৎ যে কাজে দুজন লোকই যথেষ্ট সেই কাজ তিনজনে করছে। এই অবস্থা কর্মসংস্থানে স্থবিরতার কথা বলে। বলবার মত উৎপাদন বৃদ্ধির পরও আয়, দারিদ্র ও অসাম্যের পরিমাপে গুজরাট গড়পড়তা জাতীয় গড়ের মধ্যেই ছিল, এবং নানা মাপকাঠিতে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার চেয়েও পিছিয়ে। আরেক গবেষক নিধি মিত্তাল জানিয়েছেন, কর্মসংস্থানের মাপকাঠিতে ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মানুষ যেমন ছিল, ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে ছিল তার চেয়ে খারাপ। অথচ এই সময়েই গুজরাটে উৎপাদন বৃদ্ধি ও ‘উন্নয়ন’ জোর কদমে হয়েছে। শহরাঞ্চলে বৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু ব্যায় বাড়লেও অসাম্য অনেক বেড়েছে। ওদিকে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০০৮ গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে গুজঅদিকেছিল ৬৯তম স্থানে, ছিল খাদ্য দাঙ্গার জন্য কুখ্যাত দেশ হাইতির সাথে 'আশঙ্কাজনক' বিভাগে। নরেন্দ্র মোদীর আমলে (তারপরও বিজেপীর আমলে) গুজরাটের শাসন বেসরকারি উদ্যোগের উপর নির্ভরশীল ছিল। সরকারি নীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীর প্রয়োজন ও লাভের দিক খেয়াল রাখা হতো। উন্নয়নের মডেলের মানে দাঁড়িয়েছিল নির্বাচিত পুঁজি-নিবিড় উৎপাদন শিল্পের উন্নতি এবং চাকরিহীন উন্নয়ন, মোট আয়-এ মজুরির ভাগ কমা, কৃষিকে কর্পোরেটের অধীনে আনা, জমি ব্যবহারে আইনী পরিবর্তন করে জমিতে ফাটকা চালু করা, জনকল্যান ব্যায়ে অবহেলা করা, সামাজিক পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা কাটাতেও বেসরকারি উদ্যোগে নির্ভর করা।এছাড়া পরিকল্পিত ভাবে পুঁজিপতির মঙ্গল করা এবং সাধারণ মানুষের জীবনের প্রতি চরম অবহেলা করার জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক কুফল দেখা দিয়েছে। আঞ্চলিক বৈষম্য বেড়েছে, পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামজীবনের প্রতি করুণ অবহেলা করা হয়েছে, অন্যদিকে শ্রমিক, মহিলা, তফশীলিজাতি, মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুদের বেশি বেশি প্রান্তিকীকরণ হয়েছে। গুজরাতের উৎপাদন ক্ষেত্রে ঠিকাকর্মীর সংখ্যাই বেশি এবং তা বেড়েই চলেছে। রাজ্যে মজুরির হার ভারতের প্রধান রাজ্যগুলির তুলনায় বেশ কম, ২০০৭ সাল থেকেই কমেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের জন্য বৃদ্ধিও পুঁজি নিবিড় হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে গুজরাটের কৃষিতে বছরে ৯ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি হয়েছে, যা ভারতে সর্বোচ্চ। ২০১২ সালে সাংবাদিক বিনয় প্রভাকর ও মিতুল ঠক্করকে আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের (আইআইএমএ) সেবাস্টিয়ান মরিস বলেছিলেন, কৃষি পুনরুজ্জীবনের প্রধান কারণ হল গুজরাট গত ১০ বছরে বৃষ্টিপাতের বড় পরিবর্তন থেকে উপকৃত হয়েছে। তিনি বলেন, নর্মদা জুড়ে সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্প রাজ্যের কৃষকদের সাহায্য করেছে। তাই মোদী যে বছর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন (২০০১) সেই বছরই সর্দার সরোবর বাঁধ চালু হওয়ার জন্য তা কৃষি বৃদ্ধিকে কতটা সাহায্য করেছে এবং কতটা তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য তা মাপা কঠিন।২০১৩ সালের শেষ থেকে ২০১৪ সালের শুরুতে ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি পত্রিকায় উন্নয়নের গুজরাট মডেল নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। কয়েকজন গবেষক দেখিয়েছিলেন যে, মোদী শাসনের আগে ও পরে দেশের তুলনায় গুজরাটের বৃদ্ধির প্রবনতায় সামগ্রিকভাবে কোনও পার্থক্য নেই। তবে মোদির শাসনকালে গুজরাটে কৃষি বৃদ্ধির হার মোদী-পূর্ব যুগে ভারতের তুলনায় বেশি হয়েছিল। সর্দার সরোবর বাঁধ ছাড়াও ক্রমাগত ভাল বৃষ্টিপাত এবং উন্নত বীজ নিয়ে সরকারের নীতি, আধুনিক কৃষি পদ্ধতির জন্য এই সময়কালে গুজরাটের কৃষিতে উচ্চ বৃদ্ধি হলেও কম ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (চাষের খরচ অনেক বেশি), দুর্বল শস্য বীমা (এমনকি ভাল এলাকায় কভারেজ ১০-১২%) এবং বিনিয়োগ কমার জন্য কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া ওই বৃদ্ধি টেকসই নয়। কারণ সেচের প্রধান উৎস ভূগর্ভস্থ জল রিচার্জের পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই বলে জলতল দ্রুত কমছে। কৃষি শ্রমিকের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য গুজরাটে কৃষি মজুরি সবচেয়ে কম। গুজরাটের সামাজিক সূচকে নব্বইয়ের দশকের পর খুব একটা উন্নতি হয়নি৷ তার কারণ অন্য রাজ্যের তুলনায় খুব কম কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক ব্যয় হ্রাস এবং শিল্পে বিনিয়োগ মূলধন-নিবিড় হওয়ার সাথে সম্পর্কিত। রাজ্যের ৪০-৪৫ শতাংশ পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে (চাষ, পশুপালন, দুধ, বনজসম্পদ, মাছ ধরা ইত্যাদি)। সম্পদের ক্ষয় ও অবনমন এবং প্রবল দূষণের সাথে উত্পাদনশীলতা এবং আয় কমেছে। গুজরাটের উন্নয়নে আদিবাসী জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়ে শহরের রাস্তায় বা গ্রামীণ এলাকায় কোনওরকমে তৈরি কুঁড়েঘরে বাস করতে বাধ্য হয়েছে। গুজরাট হাইকোর্ট তাই রাজ্য সরকারকে বার বার বলেছে, ভুলে যাবেন না যে তারাও রাজ্যের জনসংখ্যার একটি অংশ। উন্নয়ন যজ্ঞের নেট ফলাফল হল, জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নীচে বেঁচে থাকা। কেন্দ্র এবং রাজ্যের অনেকগুলো গরিব-সমর্থক কর্মসূচি থাকলেও তার বাস্তবায়ন তেমন হয় না। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে, গুজরাট মডেল নিয়ে খুব হই হই করা হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম গুজরাটকে বিনিয়োগের চুম্বকে পরিণত করার জন্য, বরাবর নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেছে। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের ‘ইন্ডিয়া টুডে’র সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের ২৪ শতাংশ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীকেই চান বলে জানিয়েছিলেন। মোদীই ছিলেন এক নম্বরে। ছ’মাস আগের সমীক্ষার তুলনায় তা ছিল দ্বিগুণ। গুজরাট দাঙ্গার দশ বছর পূর্তির সেই বছর, ডিসেম্বর মাসে গুজরাটে তাঁর তৃতীয়বারের বিধানসভা নির্বাচন ছিল। ঘরের রাজ্যে হারার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। গুজরাট বিধানসভায় ভোটে ফের জিতলে ইমেজ আরও বাড়বে, হয়েছিলও তাই। সবাই জানতো পরের লোকসভা নির্বাচনে (২০১৪) মোদী প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার হতে হতে চান। আমরা দেখলাম নরেন্দ্র মোদী দশ বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার পর দেশের যেমন উন্নতি হয়েছে গুজরাটে বারো বছর ক্ষমতায় থাকার পর একইরকম উন্নতি হয়েছিল। পুঁজিপতিদের পুঁজি এবং গরিব মানুষের হাহাকার বেড়েছে। এখন বলে বেড়াচ্ছেন যে তিনি ভগবান প্রেরিত জীব। মা যতদিন বেঁচেছিলেন, তিনি নিজেকে মায়ের সন্তান বলে মনে করতেন। তারপর মনে হল তা নয়, ঈশ্বর তাঁকে ইহলোকে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে। ঈশ্বর নির্দিষ্ট কাজ শেষ হবে ২০৪৭ সালে। কাজেই আমাদের তাঁকে সেই সময় দিতে হবে! এমন মানুষকে কি সাইকোপ্যাথ বলবেন না? আমেরিকার ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর অনেকটাই মিল আছে। ক্ষমতায় থেকে এতটা বাড়াবাড়ি ট্রাম্পও করেননি। তথ্যসূত্র:Vinod K Jose, The emperor uncrowned- the rise of Narendra Modi, The Caravan, Mar. 1, 2012 Binoy Prabhaakar, Mitul Thakkar, What works and what doesn't in Narendra Modi's Gujarat, The Economic Times, Jul. 2, 2012Binoy Prabhakar, How an American lobbying company Apco Worldwide markets Narendra Modi to the world, Economic Times, Dec. 9, 2012CAG blasts Narendra Modi govt for giving Rs 750 cr undue benefits to RIL, Essar, PTI, Indian Express, Apr. 3, 2013Spin doctors, propagandists and the Modi make-over, Kafila, Apr. 18, 2013Aditya Nigam, Spin doctors, propagandists and the Modi make-over, Kafila.online, Apr.18, 2013, Shipra Nigam, Gujarat and the illusion of development, Kafila.online, May 23, 2013Amartya Sen says Gujarat development model has weaknesses on social side, Indian Express, Jul. 26, 2013Christophe Jaffrelot, No model state, Indian Express, Sep. 6, 2013Poverty Amidst Prosperity: Essays on the trajectory of development in Gujarat, Edited by Atul Sood, Aakar Books 2013.Maitreesh Ghatak and Sanchari Roy, Modinomics: Do Narendra Modi’s economic claims add up, The Guardian, Mar. 13, 2014Megha Bahree, Doing big business in Modi's Gujarat, Forbes.com, Mar. 12, 2014Ashok Kotwal and Arka Roy Choudhury, Gujarat’s growth for growth’s sake, The Indian Express, Apr. 3, 2014Pramit Bhattacharya, The great Gujarat growth debate, Livemint.com, Apr. 11, 2014 Max Fishermax,The good, the bad, and the ugly of Narendra Modi, India's next leader, Vox, May 16, 2014Ajoy Ashirwad Mahaprashasta, 'Gujarat Model Is Nothing But a Jugglery of Words,' Says Former Gujarat CM, The Wire, Oct. 17, 2017Kingshuk Nag, With No Jobs in Sight, How Vibrant Is Gujarat Really? The Wire, Nov. 10, 2017Kiran Kumbhar, State's Tuberculosis Rampage Exemplifies the Failure of the 'Gujarat Model', The Wire, Nov. 27, 2017Maitreesh Ghatak and Sanchari Roy, Why So Many Economists Are Disillusioned With the 'Gujarat Model', The Wire, Nov. 29, 2017Indira Hirway, The Truth Behind the Gujarat Growth Model, The Wire, Dec. 8, 2017Nayanima Basu, Mega shows like Narendra Modi’s pet ‘Vibrant Gujarat’ do not bring investments or jobs, The Print, Jan. 19, 2019 Subodh Varma, Vibrant Gujarat: House of Cards, Newsclick, 19 Jan. 2019Damayantee Dhar, The Reality of Vibrant Gujarat Is Not as Vibrant, Newsclick, Jan. 22, 2019Hemant Kumar Shah, Why PM Modi no longer speaks of ‘Gujarat Model’: jobless in Gujarat expose his exaggerated claims, National Herald, April 19, 2019Andrew Adonis, Narendra Modi Is everything apart from what he seems, The Wire, Apr. 8, 2021What makes Modi unacceptable, Outlook Web Desk, Outlookindia.com, Feb. 4, 2022Narendra Modi:The architect of a modern state, MV Kamath and Kalindi Randeri, Rupa, 298 pages, review by Teesta Setalvad, sabrang.com Gujarat government’s debt and liabilities cross Rs 4.12 lakh cr, reveals CAG report, samachar.com, Mar.1, 2024v. অর্থাৎ ৯,৫৭০ কোটি টাকার নরম ঋণ – সেই সময় গুজরাটের বার্ষিক বাজেটের ২৫ শতাংশের কাছাকাছি এবং ওই প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগ ২,৯০০ কোটি টাকার ৩৩০ শতাংশ। vi. মোদী ন্যানো প্রকল্পের স্থানান্তর থেকে মাইলেজ পেয়েছিলেন ঠিকই, তবে ন্যানো প্রকল্প টাটা মোটরসের যন্ত্রনা হয়ে উঠেছিল। ন্যানো ১ লাখ টাকার গাড়ি হিসাবে চালু করা হলেও আসল খরচ ছিল বেশি। এছাড়া প্রযুক্তিগত কারণে ওই গাড়ি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ক্ষমতাচ্যুত টাটা মোটরসের চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বলেছিলেন যে, টাটা মোটরস ন্যানো উৎপাদনে প্রণোদনা বা ইনসেনটিভ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ‘প্রায় এক বছর আগে।’ অর্থাৎ ২০১৬ সালেই লোকসানে চলা প্রকল্পটি গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। vii. সম্ভবত এই টাকাই টাটাদের ক্রমপূঞ্জিত বকেয়া কর, যা সাংবাদিক বিনোদ জোস জানিয়েছিলেন যে, ১ শতাংশ সুদ সহ ফেরত দিতে হবে।viii. ২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী রূপানি গুজরাট বিধানসভাকে জানান যে, ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে ভাইব্রেন্ট গুজরাট শীর্ষ সম্মেলন দুটিতে রাজ্য সরকার ১৫০.৯১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে৷ix. কিন্তু সিএমআইআই (সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ইন্সট্রাকশনাল ইনোভেশন, ইয়েল) প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকার ২২০টি প্রকল্পের তথ্য এবং বিবরণ খুঁজে পেয়েছিল। প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে সম্মেলনের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত সরকারি তথ্যের সাথে তুলনা করলে খুঁজে পাওয়া প্রকল্পের সংখ্যা বেশ কম।x. ২০০২-০৩ থেকে ২০১১-১২ পর্যন্ত সময়কালে গুজরাট বৃদ্ধির হারে যে বড় লাফ দিয়েছিল, গুজরাট মডেল বলতে তাকেই বোঝায়।xi. তবে অমন রেকর্ডের পরও মোদী কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে কখনও গুজরাট থেকে লড়েননি! xii. আটটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে হওয়া মৌ (এমওইউ) থেকে পনেরো বা কুড়ি বছরে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ কম কথা নয়। কিন্তু এর পর থেকে এক একটি বিনিয়োগ সম্মেলনেই যে অঙ্কের মৌ স্বাক্ষর করার কথা ঘোষণা করা হয় তার পরিমাণই প্রায় ২০ থেকে ২৭ গুণ বেশি!xiii. ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রাজ্য সরকারের বাজেট নথি অনুসারে গুজরাটের ঋণ বেড়ে হয়েছিল ১,৯৮,‌০০০ কোটি টাকা। সিএজি রিপোর্ট অনুসারে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গুজরাট সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪,১২,০০০ কোটি।
  • হরিদাস পালেরা...
    দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ১৪ - সমরেশ মুখার্জী | চলো পাহাড়ে গতকাল রাতে বলাইদার থেকে একটা বড় ডেকচি নিয়ে রেখেছি‌লেন মলয়দা। ভোরে উঠে তাতে চিঁড়ে ভিজিয়ে দিয়ে‌ছেন। ওপরে গিয়ে দুপুরে খাওয়া হবে। নীচে থেকে ভিজিয়ে নিয়ে গেলে ওপরে বেশী জল খরচ হবে না। সাথে নেওয়া হয়েছে গাজর, শশা, গুড় ইত‍্যাদি। মলয়দা বললেন, "কাল রাতে‌ বলাইয়ের কাছে জ‍্যারিক‍্যান চেয়েছিলাম। এতোজন আছি আমরাই নীচ থেকে একটু বেশী জল নিয়ে যেতাম। ও বলেছে বাবলু‌কে দিয়ে দুটো ক‍্যানে করে একটা নাগাদ সাত, আট লিটার জল পাঠিয়ে দেবে। ঠিক আছে, আমরা তো ছেলেটাকে যাওয়ার আগে কিছু পয়সা দিতাম‍‌ই তবু বাবলু‌ খেটে রোজগার করার অভ‍্যাস করুক। হাত পেতে বখশিশের প্রত‍্যাশা করে থাকা ভালো নয়। তবে তোমরা‌ও যতটা পারো জল নিয়ে যেও। সকালে বেরিয়ে এতোখানি হেঁটে ওপরে উঠে সারাদিন ধরে ওখানে কসরৎ করে খুব জল তেষ্টা পাবে। গরমের রেশ পড়ে গেছে। যথেষ্ট জল না খেলে ডিহাইড্রেশন হয়ে যাবে।"বলাই‌দা‌র দোকানে পরোটা আর আলু, কুমড়ো‌র তরকারি দিয়ে ভালো‌ই জলখাবার হোলো। চা খেয়ে ওরা আটটা নাগাদ র‌ওনা হলো পাহাড়ের দিকে। সুন্দর অরণ্য‌ময় পথ ধীরে ধীরে উঠে গেছে ওপরে। হালকা চড়াই। পথে দেখা হোলো কলকাতার এক পাহাড়ে চড়া দম্পতির সাথে। দোলের ছুটিতে এসেছেন। তবে দলে নয়। শুধু স্বামী স্ত্রী। বসু দম্পতি‌র সাথে আছে ওনাদের বছর আটেকের পুত্র। ফুটফুটে ছেলেটি বেশ ছটফটে। মাথায় পুঁচকে টুপি পরে, হাতে একটা ছোট্ট লাঠি নিয়ে উৎসাহে আগে আগে চলেছে। ওনারা কলকাতার পাহাড়ি‌য়া গোষ্ঠীর। তাই মলয়দা, সুশীল‌দা, অমিয়দা‌র সাথে পূর্ব পরিচিত। কাল ছিলেন গ্ৰামে পরিচিত একজনের বাড়িতে। ভদ্রলোক বলেন, "দলে তো প্রায়‌ই আসা হয় এখানে, ভাবলাম এবারে আমরা তিনজনে‌ই যাই। ছোটুকে শুশুনিয়ার সাথে আলাপ করিয়ে‌ দি। আমার কাছে অনেক গল্প শুনেছে। একটু হাতে-রক‌ও হয়ে যাক।"   ছোটু‌কে বোল্ডারে রকে-খড়ি করানোর জন‍্য ৫০ ফুটের ছোট্ট একটা ১০মিমি র‍্যাপেলিং রোপের টুকরো‌ও এনেছেন সাথে। ওনার স্ত্রী‌ও এসেছেন পাহাড়ে চড়ার পোষাকে - পরণে ট্র্যাক শ‍্যূট, পায়ে স্পোর্টস শু। কথাবার্তা‌র সময় মিটি মিটি হাসছেন। বোঝা যায় ওনার‌ও সায় আছে এতে। সবার‌ই খুব ভালো লাগলো ওনাদের দেখে। ছেলেটি  কী সুন্দর প্রকৃতি, আউট‌ওয়ার্ড বাউন্ড এ্যাক্টিভিটি‌র সাথে পরিচিত হচ্ছে বাবা মার সান্নিধ্যে। বাবা মা চাইলে তাঁদের সন্তানের মধ‍্যে ছোটো থেকে অরণ‍্য, প্রকৃতির প্রতি ভালো‌বাসা, মমত্ববোধ গড়ে তুলতে পারেন। একটু এগিয়ে ওনারা অন‍্য দিকে চলে গেলেন।নটার আগেই ওরা পৌঁছে গেল রক সাইটে। মালপত্র, দড়ি দড়া নামিয়ে ওরা একটা জায়গায় রাখলো। দেখা গেল মলয়দা বলা সত্ত্বেও গৌরব আর বরুণ ওদের জলের বোতল আনেনি। ওরা দুজনে অবশ‍্য দড়িদড়া গুলো নিয়ে এনেছে। তবে হার্নেস, স্লিংস, পিটনের থলে, হেলমেট ...  বাকিরা সবাই কিছু না কিছু নিজেদের স‍্যাকে ঢুকিয়ে এনেছে। কেবল ইনস্ট্রাক্টরদের কিছু আনতে দেয়নি। ওনারা নিজেরা যখন প্র্যাকটিসে আসেন অন‍্য কথা। এখানে ওরা নজন থাকতে ওনাদের কোনো মাল আনতে দেয়নি ওরা।চুনি বলে, "তোরা কী রে? জলের বোতলগুলো বাংলোতে রেখে এলি? আমাদের তো বলতে পারতিস, আমরা নিয়ে আসতাম।" নতুন ছেলে দুটো‌ও স্কুলের বাচ্চার মতো দুটো পুঁচকে জলের বোতল এনেছে। মলয়দা বলেন, "ঠিক আছে যা হবার তা হয়ে গেছে। তোমরা বোতলগুলো এই পাথরের তলায় রাখো। নয়তো রোদ উঠলে জল গরম হয়ে যাবে। যতক্ষণ না বাবলু জল নিয়ে আসছে একটু রেশনিং করে খেও। জেঠুর ফেল্ট দেওয়া মেটাল ক‍্যানটা অনেকক্ষণ ঠান্ডা থাকবে। তাই ওটায় সবার শেষে হাত দেবো আমরা। এক লিটার জল অন্ততঃ এমার্জেন্সীর জন‍্য বাঁচিয়ে রেখ, কেমন।"অমিয়দা আর সুশীল‌দা ওদের একটু আগে এসে কোথায় চড়া হবে সেই রুটগুলো দেখতে চলে গেছি‌লেন। ফলে এই জল সংক্রান্ত আলোচনা ওনারা শুনতে পেলেন না। শুনলে হয়তো সেদিনের ঘটনাপ্রবাহ একটু অন‍্য খাতে ব‌ইতে পারতো।এসো ঝালিয়ে নি‌ই একটু পরে রকে কিছু রুট, বোল্ডারিং পয়েন্টগুলো দেখে অমিয়দা ও সুশীল‌দা এ্যাসেম্বলি পয়েন্টে এসে গেলেন। অমিয়দা বললেন, "তোমরা দুজন ক‍রে টিম বানাও। গৌরব, তুমি ক্লাইম্বিং‌টা ভালো পারো বলে শুনেছি, তুমি তাহলে নতুন দুটি ছেলেকে নিয়ে কিছু বোল্ডারিং প্রাকটিস  ক‍রো। আমি এদের ক্লাইম্বিংগুলো বুঝি‌য়ে দিয়ে তোমাদের সাথে পরে যোগ দেবো। আমরা একটা ওভারহ‍্যাং ক্লাইম্ব করার চেষ্টা করবো, একটু শক্ত, কিন্তু মনে হয় মজা পাবে।"সুমন-ঈশু, বরুণ-তুলি, চিতা-চুনি মিলে তিনটে টিম হোলো। মনে হয় ক্লাইম্বিংয়ে‌র সময় যাতে মনযোগ ব‍্যহত না হয় তাই বরুণ ও চুনি ইচ্ছে করেই এক টিমে থাকে নি।   অমিয়দা বললেন, "ক্লাইম্বিংয়ে‌র ব‍্যাপারে আমি একটু সনাতনপন্থী। আমি যা কিছু অভিজ্ঞ পাহাড়ী দাদা‌দের কাছে যেভাবে শিখেছি তোমাদের সাথে সেভাবেই ভাগ করে নিতে চাই। কতটা দিতে পারবো জানি না তবে তোমরা যতটা নিতে পারবে সেটা তোমাদের কৃতিত্ব। কী রাজি তো?"ওরা সবাই একযোগে মাথা নাড়ে। অমিয়দা বললেন, "দ‍্যাখো আমি তো তোমাদের কোর্সে বা এর আগে কখনো পাথরে চড়তে দেখিনি। তাই সরাসরি পাথরে গিয়ে চড়ার আগে শৈলারোহণের যে কিছু নিয়মকানুন আছে, যা তোমরা বেসিক রক ক্লাইম্বিং কোর্সে শিখেছো সেগুলো একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক। তোমরা হয়তো জানো এই শৈলারোহণ ব‍্যাপার‌টা শুরু হয়েছিল ইওরোপে, বলা ভালো মূলতঃ ব্রিটেনে। তাই এখোনো বহু দেশে ব্রিটিশ মাউন্টেনিয়ারিং কাউন্সিল বা BMC প্রবর্তিত ক্লাইম্বিং টেকনিক, প্রোটোকল, সুরক্ষা নিয়ম, ইকুইপমেন্ট স্পেসিফিকেশন ইত্যাদি গোল্ড স্ট‍্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। তার কারণ ব্রিটিশ‌রা খুব মেথডিক‍্যাল।" "তাই আমরা‌ও চড়ার আগে কয়েকটা সংজ্ঞা, নিয়ম, ধারণা আর একবার ঝালিয়ে নেব। এগুলো মনে গেঁথে গেলে চড়তে গিয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। আমি প্রশ্ন করবো, তোমরা জবাব দেবে। তোমরা সবসময় যে নিজেদের মধ‍্যে‌ই চড়বে তার তো কোনো মানে নেই, পরে কখোনো অবাঙালি বা অভারতীয় দলেও অভিযানে যেতে পারো, তাই standard climbing calls গুলো আমরা এখানে‌ ইংরেজি‌তে বলবো। পাহাড়ে চড়ার সময় দুজন ক্লাইম্বারের মধ‍্যে দুরত্ব বেড়ে গেলে, পাথরের আড়াল হয়ে গেলে বা জোরে হাওয়া চললে অনেক সময় কথা শোনা বা বোঝা যায় না। তখন লম্বা বাক‍্য বলা‌র প্রয়োজন নেই। এই Standard Climbing Calls গুলো তাই সেভাবে তৈরী। একটি দুটি শব্দে। এখানে‌ও আমরা এগুলো পরিস্কার গলায় উচ্চস্বরে বলার অভ‍্যাস করবো। মনে রেখো, পাহাড়ে চড়ার সময় ক্লাইম্বিং পার্টনারদের মধ‍্যে ভুল বোঝাবুঝি‌র ফল হতে পারে মারাত্মক‌।" "What is rock climbing?" অমিয়দা জানতে চাইলেন। প্রশ্ন‌টা খুব সরল বলেই ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। শেষে ঈশু‌ই দলের মান রাখে, "Rock climbing is moving on the predominantly vertical rock surface with some specific techniques within the margin of safety."  সুমনের মনে হয় মেয়েটা খুব সিনসিয়ার।অমিয়দা‌ও বলেন, "Excellent! একদম textbook definition. ঈশিতার শেষ কথা‌টা খুব গুরুত্বপূর্ণ - within the margin of safety. শৈলারোহণ একটি ঝুঁকিপূর্ণ adventure activity. ঝুঁকি নিতে না চাইলে ক‍্যারম বা দাবা খেলা যেতে পারে। তবে আমরা নেবো calculated risks এবং প্রয়োজনীয় safety measures. তারপরেও যদি দুর্ঘটনা ঘটে সেটা দুর্ভাগ্য। এ দুটো ব‍্যাপার খেয়াল না রাখলে শৈলারোহণ দায়িত্ব‌জ্ঞান‌হীন আনাড়ীপনা হয়ে যায়। তোমাদের মধ্যে ভবিষ্যতে কত জন সিরিয়াসলি শৈলারোহণ করবে জানি না কিন্তু শুরুর দিকেই কোনো bad fall হলে মনে ভয় ঢুকে যেতে পারে যা কাটিয়ে ওঠা মুশকিল। সেটা মোটেও কাম‍্য নয়।  তাই আশা করবো তোমরা সুরক্ষা পদ্ধতি উপেক্ষা করবে না।"  ওরা সবাই সম্মতি‌সূচক মাথা নাড়ে। (চলবে)
    ভোটুৎসবে ভাট - স্বপনে তাহারে (পুনশ্চ) - সমরেশ মুখার্জী | শিবাংশু‌র অতীতের লেখাটি পড়ে বর্তমান শিবের গাজন আমার দুই প্রাক্তন  বন্ধুর সাথে এক রসিক শিক্ষকের মিথস্ক্রিয়া আধারিত। পাঁচ থেকে বারো ক্লাস অবধি আমি পড়েছিলাম হাওড়ার এক মামূলী স্কুলে। কিন্তু আমার কিছু বন্ধু - উৎপল, অর্জুন, চন্দন, অমিতাভ, সুকুমার পড়তো এক ঐতিহ্য‌ময় স্কুলে - হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন। সে স্কুলে‌র অনেক প্রাক্তন ছাত্র পরে নানা উচ্চপর্যায়ের পদ অলঙ্কৃত করেছে।  তো সেই স্কুলে বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন শ্রী বামন‌দেব চক্রবর্তী। সেকালে ইংরেজী গ্ৰামারে  নেসফিল্ড সাহেবের মতো সমাদর পেয়েছেন প্রফুল্ল কুমার দে সরকার। তেমনি বামনদেব চক্রবর্তীর বাংলা ব‍্যাকরণ‌ও ছিল এক প্রামাণ্য গ্ৰন্থ। ১৯৬৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়ে হালেও একবিংশতম পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া পুনর্মুদ্রণ হয়েছে বহু‌বার। অর্থাৎ মূল প্রণেতার প্রয়াণের পরে‌ও কিছু কালজয়ী পুস্তক বাজারে চলতে পারে বহুদিন। সেকালে অনেক বাড়িতে‌ই পড়ার ঘরে থাকতো বামনদেব চক্রবর্তীর বাংলা ব‍্যাকরণ ও   পি.কে. দে-সরকারের ইংরেজী গ্ৰামার। আমি যদিও ও দুটোতে‌ই লবডংকা তবু দিদি ও দাদার দৌলতে আমাদের বাড়িতে‌ও ছিল ঐ দুটি ব‌ই। দাদা, দিদি জীবনের পথে ছড়িয়ে গেছে দূরে।  আমার কাছে রয়ে গেছে ব‌ই‌ দুটো - যত্ন সহকারে। ওটা‌ই আমি ভালো‌‌ পারি - সযত্নে সাজিয়ে রাখতে নানা অকিঞ্চিৎকর দ্রব‍্য। এবং স্মৃতি - তবে যাদের নিয়ে ঘেরা তা,  তাদের হয়তো মনে‌ও থাকে না তা।বন্ধুদের সাথে আড্ডায় শুনেছি ব‍্যাকরণের মতো নীরস বিষয় পড়ালেও এবং রাশভারী ব‍্যক্তি‌ত্বের অধিকারী হলেও অন্তঃসলিলা নদীর মতো বামনদেববাবুর অন্তঃকরণে‌ ব‌ই‌তো প্রচ্ছন্ন রসময়তা। তাই ব‍্যাকরণের পাঠ‍্যপুস্তক লিখলেও  তিনি লিখেছেন দুটি উপন‍্যাস‌ও। তাদের নামকরণে‌‌‌ও পাওয়া যায় তাঁর রসবোধের পরশ - "বিধিচক্রের অজ্ঞাত‌বাস" এবং "কহনে না যায়"।বামনদেব বাবুর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন ক্লাসে ছাত্রদের নামের বদলে পদবী ধরে ডাকা। তবে এক‌ই পদবী‌র অন‍্য ছাত্র থাকলেও যাকে উদ্দেশ করে ডাকা হচ্ছে সে কিন্তু ঠিক বুঝতে পারতো। কারণ তিনি সম্বোধন করতেন তার দিকে দৃষ্টি‌ নিক্ষেপ করে। সাথে থাকতো তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে পদবী‌র আগে, পরে কিছু শব্দ সংযোজন। যেমন "ওহেএএ চাটুজ্জ‍্যে" বা "এই যেএএ ঘোষ মহাশয়"। তা শুনে এড়িয়ে যেতে চাইলেও যে মনকানা তার স‍্যারের দিকে না তাকিয়ে উপায় থাকতো না। ছাত্রদের মারধোর তিনি পছন্দ করতেন না। তাই বিচ‍্যূতি হলে তাকে বাংলামাধ‍্যমে সবার মাঝে সেঁকতেন। সেটা তিনি খুব উপভোগ‌ও করতেন। দুটি উদাহরণে তা পরিস্কার হবে। তার দ্বিতীয়‌টিতে থাকবে বর্তমান "স্বপন‌কুমার" প্রসঙ্গ।অমিতাভ ব‍্যানার্জী গৌরবর্ণ, দীর্ঘ‌কায়, সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী। সময়ের একটু আগে‌ই হরমোনের তৎপরতা‌য় তার মুখে দেখা গেছি‌ল দাড়ি গোঁফ। দশম ক্লাস পেরোতে ওর সমবয়সীদের ওপরোষ্ঠ, চিবুক বা গণ্ডদেশে যখন সবেমাত্র নবদূর্বার আভাসমাত্র দেখা দিচ্ছে অমিতাভ তখন থেকেই নিয়মিত সেলুনে যায়। ওর ঐ দাড়ি গোঁফের প্রাদুর্ভাব ও পরিপুষ্ট চেহারার জন‍্য ওকে ক্লাসের মধ‍্যে একটু  বড়ই লাগতো। কিন্তু মনটা তো সেই হারে পরিপক্ক হয়নি। তাই তখন‌ও ওর স্বভাবে রয়ে গেছিল কিছু কৈশোরোচিত কৌতূহলের রেশ।তো একদিন হয়েছে কী, বামনদেব বাবুর ক্লাসে অমিতাভ পিছনের দিকে তৃতীয় বেঞ্চে বসে বাঁদিকে‌র জানলা দিয়ে ক্ষণিক বা‌ইরে তাকিয়ে অন‍্যমনস্ক হয়ে গেছিল। বামনদেব বাবুর তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তা এড়ালো না কিন্তু তিনি এক‌ই ভঙ্গিতে পড়িয়ে চললে‌ন। যেন কিছুই খেয়াল করেননি। কিন্তু আধ মিনিট বাদে‌ও অমিতাভ‌কে গভীর একাগ্ৰতায় বাইরে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি চুপ করে গেলেন। তাও অমিতাভর নজর ফিরলো না স‍্যারের দিকে। স‍্যারের দৃষ্টি অনুসরণ  করে প্রথম দিকের বেঞ্চের কিছু ভালো ছেলে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন দিকে চাইলো। কিন্তু অমিতাভ যেন সেই মুহূর্তে হয়ে গেছে অহল‍্যার কিশোর ভার্সন। জমে গিয়ে নিথর ভাবে তাকিয়ে আছে বাইরে।বামনদেব বাবু তাঁর ট্রেডমার্ক স্টাইলে বললেন, "ওহেএএ বাঁড়ুজ্জ‍্যে, বিচ্ছেদটা কিন্তু এদিকে হচ্ছে।"  অমিতাভ চমকে এদিকে তাকিয়ে বলে, "এ্যাঁ, কী বললেন স‍্যার? ঠিক বুঝতে পারলাম না।"  উনি ওনার পেটেন্টেড রসময় ভঙ্গিতে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, "এ্যাঁ নয়, হ‍্যাঁ। বিচ্ছেদ। মানে সন্ধি বিচ্ছেদের সূত্রগুলো এদিকে, মানে ক্লাসের ভিতরে বোঝা‌নো হচ্ছে। বাতায়নের বাহির হতে আকাশবাণী হচ্ছে না। তুমি বাইরে কী দেখছো বলো তো তখন থেকে?""স‍্যার, একটা প‍্যাঁ‌চা" কিঞ্চিৎ ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খেয়ে বলে অমিতাভ।  "প‍্যাঁচা-আ-আ-আ!!!" মা লক্ষীর বাহনকে বিলম্বিত লয়ে টেনে, বিষ্ময়সূচক ধ্বনি সহকারে সম্বোধন করে অতঃপর তিনি অমিতাভ‌র উদ্দেশে নিক্ষিপ্ত বাক‍্য সম্পূর্ণ করেন "দিনদুপুরে তুমি জানলার বাইরে তাকিয়ে পেচক দেখতে পাচ্ছো?""হ‍্যাঁ, স‍্যার, দেখুন আপনি, ঐ তো আমগাছের ডালে বসে আছে, সাদা একটা লক্ষীপ‍্যাঁচা। তাই তো আমি‌ও খুব অবাক হয়ে গেছি‌লাম স‍্যার।"     বামনদেববাবু জানলা দিয়ে আমগাছের দিকে তাকান। বেচারা অমিতাভ। তার আগে‌ই সে‌ই প‍্যাঁ‌চা বা প‍্যাঁ‌চানী ফুরুৎ করে উড়ে গেছে। তার নাম ধরে বামনদেববাবুর বেশ জোরে ডাকার জন‍্য‌ও হতে পারে, ওদের তো শ্রবণক্ষমতা খুব তীব্র।ঐদিকে পাশেই  ছিল একটি তিনতলা নিবাস। লক্ষীপ‍্যাঁচা উড়ে গেলেও, পুনরায় অমিতাভর দূর্ভাগ্যের ফলে‌ই হয়তো ঠিক তখন‌ই ছাদের পাঁচিলে কাপড় মেলছিল একটি ফুটফুটে সদ‍্যপরিণীতা লক্ষীমন্ত বৌ। বামনদেব বাবু আমগাছে যা খুঁজছিলেন না পেয়ে খানিক তাকিয়ে র‌ইলেন ছাদের দিকে। হয়তো মনে পড়লো তাঁর যৌবনের কথা। একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে তিনি ফিরে এলেন ব্ল‍্যাকবোর্ডের সামনে।  অমিতাভ দাঁড়িয়ে আছে হতভম্ব হয়ে। তিনি উদাস ভঙ্গিতে বললেন, "আসলে তোমার কোনো‌ দোষ নেই বুঝলে বাঁড়ুজ্জ‍্যে। বয়সটা কুড়ি‌ পার হ‌ওয়ায় আগে‌ই তোমার মনটা করতে শুরু করেছে উড়ি উড়ি। তাই ভরদুপুরে প‍্যাঁ‌চা দেখতে পাচ্ছো। যাকগে এবার এদিকে একটু মন দা‌ও।" স‍্যারের বলার ভঙ্গিতে ক্লাশসুদ্ধ ছেলে মুখ টিপে হাসছে। অমিতাভ গালে দুদিনের না কামানো দাড়ি‌তে হাত বুলোতে বুলোতে তখন এক পাজি প‍্যাঁ‌চার প‍্যাঁ‌চে পড়ে অপ্রস্তুতের একশেষ। অকালে শ্মশ্রু গুম্ফের আধিক‍্যর জন‍্য ওর বন্ধু‌রা ওকে আদর করে ডাকতো 'দাদু' বলে। ঐ ঘটনার পর ছাদে ঐ বৌটি এলে ছেলেরা অমিতাভ‌কে ক্ষ‍্যাপাতো, "ঐ দ‍্যাখ দাদু, বৌমা এসেছে রে।" অমিতাভ হাসিখুশি ছেলে। এসবে রাগতো না বরং উপভোগ‌ই ক‍রতো।উৎপল ছিল ব‌ইয়ের পোকা। সবরকম ব‌ই পড়তো। তবে স্কুলে নিয়ে যেতো কেবল স্বপনকুমার। চটি ব‌ই। সুবিধা হোতো। নীরস ক্লাসের মাঝে ফাঁক পেলে ব‌ই পড়তো। সেদিন নিয়ে গেছিল কালনাগিনী সিরিজের ১৭ নম্বর চটি - মহাশুন‍্যে কালনাগিনী। এমনি‌তে টিফিন টাইমে পড়লে‌ও সেদিন এমন একটা জায়গায় সুন্দরী লাস্যময়ী দস‍্যুনেত্রী কালনাগিনী‌ আশমানে ঝুলন্ত যে তার‌পর কী হোলো জানার জন‍্য মনটা আঁকুপাঁকু ক‍রছে ওর। তখন কি আর নীরস ব‍্যাকরণের কচকচি শুনতে ভালো লাগে।  তাই বামনদেব বাবু কিছু বলছেন, মাঝে মাঝে বোর্ডে লিখছেন উৎপল পিছনের দিকে একটা বেঞ্চে বসে মনযোগী পড়ুয়া‌র মতো বামনদেব‌বাবু‌র‌ই মোটা ব‍্যাকরণ ব‌ইটা হাই বেঞ্চে রেখে, মাঝখানে চটি কালনাগিনী রেখে পড়ে যাচ্ছে। ভাবখানা যেন স‍্যার যা পড়াচ্ছেন সেটা‌ই ও ব‌ইয়ের পাতায় দেখছে। সেদিন তিনি যেভাবে অমিতাভ‌র অন‍্যমনস্কতা ধরতে পেরেছি‌লেন তা ছিল সহজ। কারণ ও তাকিয়ে ছিল বাইরে। আজ উৎপল ব‌ইয়ের ওপর মুখ ঝুঁকি‌য়ে থাকলেও অভিজ্ঞ শিক্ষকের মনে হোলো শরীর ক্লাসে থাকলেও উৎপলের মন পড়ে আছে অন‍্য কোথাও। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, "এ‌ই যে দত্তর পো, আজ কী পড়ানো হচ্ছে?"  উৎপলের বাংলাতে আগ্ৰ‌হ‌ এবং দখল‌ও আছে। তাই জানতো কী পড়ানো হচ্ছে, তা‌ই পত্রপাঠ বলে, "অলঙ্কার প্রসঙ্গে সমাসোক্তি নিয়ে স‍্যার।" বামনদেব বাবু বলেন, "আচ্ছা বলোতো আজ ক্লাসের শুরুতে ইংরেজী‌ গ্ৰামারে এর সাথে কার মিল আছে বলেছিলাম?"  উৎপল বলে, "Personification বা Metaphor এর সাথে স‍্যার।"  বামন‌দেব বাবু প্রফুল্ল হয়ে বলেন, "একদম ঠিক, আচ্ছা তুমি তো ব‌ই‌টা খুলেই রেখেছো, সমাসোক্তি‌র একটা উদাহরণ দিতে পারো?" উৎপল চালু ছেলে, এসব আগেই দেখে রেখেছে, ওর মনেও থাকে ভালো, তাই স‍্যারের ব‌ইয়ের‍‌ই একটা উদাহরণ ব‌ই না দেখেই পত্রপাঠ দিয়ে দিলো - "যতীন্দ্র‌নাথ সেনগুপ্ত‌র লোহার ব‍্যাথা, থেকে বলছি স‍্যার।"“রাত্রি গভীর হলাে, ঝিল্লীমুখর স্তব্ধ পল্লী, তােলাে গাে যন্ত্র তােলো। ঠকা ঠাঁই ঠাঁই কাঁদিছে নেহাই, আগুন ঢুলিছে ঘুমে, শ্রান্ত সাঁড়াশি ক্লান্ত ওষ্ঠে আলগােছে ছেনি চুমে, দেখ গাে হােথায় হাপর হাঁপায়, হাতুড়ি মাগিছে ছুটি ….।”  বামনদেব বাবু বলেন "থাক থাক, যথেষ্ট হয়েছে, খুব সুন্দর। আচ্ছা বলতো এটা সমাসোক্তি‌র উদাহরণ কেন?"  উৎপল বলে, "কারণ স‍্যার এখানে উপমানের কোনো সরাসরি উল্লেখ ছাড়াই কেবলমাত্র উপমেয়র দ্বারাই উপমান সম্পর্কে বলা হচ্ছে।" ব‍্যাকরণ রসে রসসিক্ত শিক্ষক ছাত্রের এহেন উত্তরে খুশি হয়ে বলেন, "উপমান ও উপমেয়‌ বলতে কী বুঝি আমরা?"  কবিতা লেখা‌য় হাত পাকাতে গিয়ে উৎপল এসব ইতোমধ্যে গুলে খেয়েছে, তাই বলে, "যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে তা উপমান আর যার মাধ‍্যমে বলা হচ্ছে তা উপমেয়।" বামনদেব‌বাবু মজা পেয়ে গেছেন, এই না হলে ছাত্র, "তাহলে একটা সরল উপমা দিতে পারো যাতে উপমান ও উপমেয় দুটোর‌ই উল্লেখ আছে?"  উৎপল বলে, "যেমন স‍্যার, চাঁদের মতো সুন্দর মুখ। এখানে মুখ উপমান মানে যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে, আর চাঁদ উপমেয় মানে যার সাথে তুলনা টেনে উপমাটি দেওয়া হচ্ছে।" বামনদেব‌বাবু চমৎকৃত হয়ে বলেন, "তুমি এসব ব‌ই দেখে বলছো নাকি?"  উৎপল বলে, "না স‍্যার, ব‍‌ই‌টা আপনি যা পড়াচ্ছেন সেখানে‌ই খুলে রেখেছি বটে তবে এগুলো আগেই পড়া ছিল।"কিন্তু বেচারা জানতো না বামনদেববাবুর ঈগলের মতো তীক্ষ্ম দৃষ্টি‌কে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নয়। তাঁর লেখা ব‌ইয়ের কোথায় কী আছে তা তাঁর নখদর্পণে। উৎপলের এই কথাতেই ওনার চোখে পড়ে ও যেভাবে মাঝ বরাবর ব‌ই‌টা খুলে আছে সেখানে অলংকার অধ‍্যায়টা থাকার কথা‌ই নয়। ওটা‌তো আছে ব‌ইয়ের শেষের দিকে। তাহলে কোথায় খুলে আছে ও ব‌ই‌টা?  আর কেন‌ই বা? ব‌ই‌তো বাড়িতে গিয়ে দেখা‌র জন‍্য। ক্লাসে যখন তিনি পড়াচ্ছেন তখন তো মন দিয়ে শোনা বা বোর্ডের দিকে নজর দেওয়ার কথা। উনি বলেন, "ব‌ইয়ের ঠিক ঐখানে আঙুল দিয়ে ব‌ই‌টা নিয়ে এদিকে এসো তো।"  এবার উৎপলকেও পাষাণী অহল‍্যার  ভূমিকা‌য় দেখা যায়। কিছু করার নেই। যেতেই হবে। উৎপল ভাবে স‍্যারের কাছে যাওয়ার আগে সর্প‌মুক্ত হয়ে যাওয়া‌ই ভালো। ওঠা‌র সময় ব‌ইয়ের মাঝখান থেকে আঙুলটা একটু কায়দা করে সরায়। বেঞ্চের ধারে‌ই বসে ছিল ও। কিন্তু দুর্ভাগ্য উৎপলের। ব‌ই‌টা দুটো বেঞ্চের মাঝে‌ পড়লো না, যেমনটা ও চেয়েছিল। বরং ঠকাস করে ব‌ই থেকে প‍্যাসেজে‌র মেঝেতে এসে পড়লো কালনাগিনী। তাই দেখে স‍্যার এগিয়ে এলেন। ব‌ই‌টা তুললেন। ঝকাস প্রচ্ছদ এবার সটান বামনদেব‌বাবুর মুখাভিমুখে। একটা বিমান গুলি খেয়ে সাদা ধোঁয়া ছেড়ে লাট খেয়ে নীলাকাশ থেকে ভূতলমুখী। আর হলুদ স্লিভলেসের ওপর জরিপাড় টকটকে লাল  বেনারসী পরা কালনাগিনী নগ্নপদে নৃত‍্যমূদ্রায় নামছেন প‍্যারাস‍্যূটে ঝুলে। মুখায়ববে এবং মুখভাবে দস‍্যুনেত্রী‌র কোনো ছাপ‌ই নেই বরং যেন অরুন্ধতী‌দেবীর আভিজাত্যের ছোঁয়া। তার নৃত‍্যময় শারীরভাষ‍্য দেখে হেমা মালিনী‌ও হীনমন্যতায় ভুগবে। প্রবল হাওয়ায় কালনাগিনী‌র উন্মুক্ত কেশদাম উড়ছে নাগিনী‌মূদ্রায় কিন্তু শাড়ি যে কে সেই।যেহেতু ক্লাসে বসে ব‌ইয়ের ফাঁকে কালনাগিনী গুঁজেও উৎপল ওনার সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে‌ছে তাই উনি সেদিন ওকে কিছু‌ই বললেন না। তবে পরবর্তী দেড় বছরে, যতদিন না ওরা উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে স্কুল ছেড়ে চলে গেছিল,  ক্লাসে তিনি উৎপলকে সম্বোধন করতেন, "এই যে কালনাগিনী, এটা বলতে পারো?" বলে। হয়তো সুরসিক শিক্ষকের ছাদের সেই লক্ষীমন্ত বৌটির মতো সুন্দরী কালনাগিনী‌কেও ভালো‌ লেখেছিল। আর মনযোগী ছাত্র উৎপলকেও।পুনশ্চঃ- বাস্তবে অমিতাভ ও উৎপল পর্ব ঠিক এভাবে ঘটে নি। বহুদিন আগে শোনা ঘটনার কেবল মূল দুটি উপাদান সত‍্য - প‍্যাঁ‌চা ও কালনাগিনী। তবে রচনাটি‌কে রসমালাই বানাতে পাশের ছাদে লক্ষীমন্ত টুকটুকে বৌ আমদানি - আমার মস্তিষ্ক‌প্রসূত।
    দিলদার নগর - Aditi Dasgupta | ঘরে এলে নাকি গেলে দেহলীটি ছুঁয়ে?নিশ্চিত না জানি।যেই পথে তুমি গেলে সাগরের ঢেউয়ে ---সেই পথে আমি তো উজানী ! হে মহাপ্রভু, এসেছিলে নাকি আসোনি? ছুঁয়ে গেছো তুমি এ নগর? নাকি চলে গেছ বিছানো শাটিকাটির প্রান্তটুকু চুমে? একশ বছর আগে, এক ভূমিপুত্রের লেখা পুঁথি, সহজ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিমায় বলে গেছে এ নগরে তোমার পরিক্রমার কথা। আবার দেখো, কোথাওবা উল্লেখই নেই এ মদিনার-- তোমার যাত্রাপথের আলোচনায়! আজকের  ট্যুর প্ল্যানের ধারণা নিয়ে কেমনেই বা মাপা যায় তোমার যাত্রাপথের প্রতিটা বিন্দু? আমরা মাপি স্থানগুলির ভৌগোলিক দুরত্ব দিয়ে, তারা মাপতো গম্য আগম্যের নিরিখে। পথের কষ্ট, চোর ডাকাতের উপদ্রব, যান বাহনের অভাব ---- কাছের পথকেও করে দিত দূরের! এই উপদ্রব, এই নিরিখ- আজও অপ্রাসঙ্গিক নয়। তবু, তখন ছিল তা বিবেচনার কেন্দ্রটিতে। তাই হাতে কড়ি , পায়ে বল ছাড়া শ্রীক্ষেত্র যাত্রী অচল। এদিকে নদী, খাল বিলগুলির নাব্যতা, পরস্পরের হাতধরাধরী ছিল অনেক বেশি।লোকের ভরসাও ছিল বুঝি তাদের উপর অনেকটাই। তাই জলপথে আনাগোনার চলটিও বেশ ছিল,ঘুরপথে খরচা বেশি হলেও।তবে জলদস্যুও ছিল। আর ছিল জলের ধার দিয়ে দিয়ে চলা। মানুষই পথ কাটে, এক এক অঞ্চলের মানুষ এক এক পথে। নীলাচলের পথও তাই এসেছে বিবিধ আঞ্চলিক ধারাগুলি ধরে।আন্দুল দিয়ে তখনকার নিমকির খাল পেরিয়ে সাঁকরাইল পাঁশকুড়ার রাস্তাটি অনেকটাই মিলে যায় বাস ছোটার চেনা পথটির সাথে। তবে সব পথই এসে,  মিলে যেতো শেষে,  বুঝি জনার্দন গড়ে --- নীলাচলের প্রবেশদ্বারে। তারপর বিল্বদহ , দণ্ডপাঠ, বারিদেব, কেশাধিপতি,হয়ে পথ মোটামুটি এখনকার চেনাজানা।  তোমার সেই পথটি ছিল দেখি তাম্রলিপ্ত ছুঁয়ে। আজকের ধুঁকতে থাকা হাজামজা আদিগঙ্গা তখন মূল গঙ্গা, তার পাশে পাশে কত গ্রাম নগর বন্দর ! ভাঙ্গাচোরা ঘাট,মন্দির দেউল,নামগুলি- ফিসফাস করে বলে সেই গঙ্গা হৃদি কথা! সেই নদী ধারের জঙ্গুলে পথ ধরে গেছো  তুমি,  কালীঘাট,গড়িয়া ছুঁয়ে, তখনকার   আঁটিসারা -আজকের বারুইপুর ধরে, ছত্রভোগ -জয়নগর -মজিলপুর - মথুরাপুরের  পথে পথে চিহ্ন রেখে রেখে।এইখান থেকেই সরাসরি নদী পেরিয়ে গেলে তাম্রলিপ্ত ? নাকি আরো দক্ষিণে হাজীপুরে,   যার সায়েবি নাম ডায়মন্ড হারবার? সেখানেই পেরোলে নদীটি তাম্রলিপ্ত পথে? দুটোই পাচ্ছিতো!  হাজীপুরের পথে যেতে যেতেই কি মথুরাপুর অঞ্চলে রেখে গেলে গল্পগুলি?  নদীটি কোথায় পেরোলে তাই নিয়ে যতটা না গোল, তার চেয়ে বেশি গোল বাঁধে তাম্রলিপ্ত নগর হতে জনার্দনগড়ে র পথটি নিয়ে !মথরাপুরী দাবিদার মদিনা নগরের নাম নেয়না, হাজিপুরী দেখায় মদিনা নগর হয়েই তুমি এগিয়েছ জনার্দনের পথে। দুটি র কোনোটিই উড়িয়ে দেওয়া যায়না! মথুরাপুরি পথটি বাম দিক ঘেঁষে চলে যায়,আর হাজীপুরী পথ  তাম্রলিপ্ত  থেকে ডান দিকে এগিয়ে এ নগরে হোসেনশাহী পথে এসে মেশে। সেখান থেকেই সে পা বাড়ায় জনার্দন এর দিকে । যাহা হোক,তাহা হোক। পথঘাট,জমি, কিংবা নদীর চলার পথ -চিরকাল কি একই রকম থাকে?তোমা নিয়ে লড়ালড়ি তোমাকে হারায়! হাঙ্গামা করে দেখি আজকাল বিস্তর লোক। অস্ত্রের ঝংকারে,স্বর্ণ মুদ্রার ঝনঝনায়, দেব- দেবালয়ের জাঁক জমকে -হরি আর আল্লাহ কে দেয় লড়িয়ে। যাকগে সেসব কথা। কি আসে যায় প্রভু--- ঘরে এসে বসলে,নাকি দুটো কথা কয়ে চলে গেলে দুয়ারে দাঁড়িয়ে? তোমার সুগন্ধই তো ভেসে বেড়ায় আকাশে বাতাসে--- এ নগরীর চারপাশে!  তবু থাকে কথা । থাকে অভিমান,ব্যথা ।  ছাপোষা গেরস্ত মনতো ! কোনো চলে যাওয়াই মানতে পারেনা! অতিথ এলেও তো বলি ,আর দুটো দিন থেকে যাওগো! আর তোমার ঘর ছাড়া? তাই নিয়ে তো ভাবের প্রলয়গো!  রাজনীতির কথাও বুঝি কানে আসে। আমজনও পারেনি বাঁচাতে তার ভাব, সংস্কার, সিদ্ধান্ত, ব্যক্তিঅনুভব---সে মহা বিস্তারিত বিপুল তরঙ্গের অভিঘাত হতে !  দেবদ্বিজে ভক্তি সামলিয়ে, ছাপোষা গেরস্ত মন সেদিনও তো পারেনি মেনে নিতে! সবার ই তো ঘরে ঘরে প্রায়, বৃদ্ধ পিতা মাতা --- সন্তানের মুখ চেয়ে, সীমন্তিনি গৃহিনীসচিব, ওষ্ঠের উপরে নীল তৃণরেখা নিয়ে কিশোর বালক, হয়তোবা নবনীত লাবন্য ছড়িয়ে ---আদরের কন্যাটি ---বিষ্ণুপ্রিয়া সম! সেই বালিকাটি,বাসরে ঢুকতে গিয়ে চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে রক্ত ঝর ঝর --- এলিয়ে পড়লো তব কোলে, প্রভু! সারাটি জীবন বুকেতে, মনেতে,জড়িয়ে রাখার আশ্বাসটি দিয়ে নিয়ে এসেছিলে তুমি তাকে !  আজ জোৎস্নায় মাখামাখি সেই কচি মুখ, লেপখানা একটু বুঝি সরে গেছে, আহা! ফেলে দিয়ে এলে তুমি তারে?একা বিছানাতে,এই ঠাণ্ডার রাতে? নবদ্বীপের ঘাট শুনশান, চলে গেলে কণ্টক দ্বীপে,ওই পারে।এই ঘাট আজও তাই নিদয়ার ঘাট হয়ে রয়ে গেল! সাধারণ সংসারী জনেই তো দেয় নাম--- প্রয়োজনে,ভালবেসে,অভিযোগে।সাধুর তো সকলই সমান। এই ঘাট তাই, রয়ে গেল তাহাদের অভিযোগ হয়ে তব প্রতি---হে রমাপতি । আর ‘মা’টি? মাটি --- ভূমি – ধরণী ! নিজেকে বিদীর্ণ করে জন্ম দেন  তিনি শস্য, তৃণ বৃক্ষরাজি,যাবতীয় প্রাণীকুল,এবং মানুষ। যতবার জন্ম দেন ততবার নতুন জন্ম হয় তাঁরও। তাঁর চেয়ে বড় ব্রাহ্মণ,আর কেউ আছে নাকি প্রভু ? কেন কাঁদিবেনা?   মিছামিছি কাঁদেছি আমোরা? পট চিত্র,যাত্রাপালা গানে,বসি কালাচাঁদ মন্দির চাতালে!সন্তানের নাম ধরি কাঁদিবার মাতৃ অধিকার ---তাও বুঝি ভাসি যায় ব্যথা নীল যমুনার জলে!দশ দশ বার ---বত্রিশ নাড়ি ছিঁড়ে দ্বিজ হওয়া জননীরে হায় ---এই সেদিনের কচি পুঅ,কুনকে মাপে দেয় গ সান্তনা ---“কৃষ্ণ বলি কাঁদ মা জননী, কেঁদোনি নিমাই বলে”!                                     প্রকৃতি জড়িয়ে বাঁচা সে প্রাকৃত জন,                  নারী,শূদ্র,আর আর আছো হে যাহারা,                  বল বল,আমাদের ভাব- অধিকার                  তবে কি অগ্রাহ্য হয় ব্রাত্যজন বলে?  প্রকান্ড শরীর ছিল নাকি তোমার, গৌর? কাষ্ঠ পাদুকা সেই মত? সে ভারী পাদুকাদুটি তুমি চাপিয়ে দিয়ে এলে ওই কচি মেয়েটির বুকে। প্রভু , চোদ্দ না পুরানো সব বেটাবিটি শিশু বলে ধরে এ সমাজ,এখন। আর সশরীরে যাদের সঙ্গ করলে কৃষ্ণ নাম সাথে নিয়ে,তারা সবাই তোমায় হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছিলতো? তুমিতো অপ্রকট হলে দারুব্রহ্মশরীরে? নাকি মন্দির প্রাচীরে?                   সমুদ্রেরও কথা তোলে কেউ---                   মূর্তিটিও দাঁড়িয়ে সে মতো ,                   স্বর্গদ্বারে পাব্লিকের ঢেউ!  সেতো চেয়েছিল তোমাকেই অনুসরণ করতে। দিলে আর কই? তোমার দায়িত্বগুলি দিয়ে বেঁধে রেখে গেলে! ফুলদানিটাই যদি ভেঙে যায় ঠাকুর,  বাগান থেকে তুলে আনা ফুলটি কি আর বাঁচে? সেতো শুধু সং সেজে সংসারে শুকিয়ে মরা! যাপন আর হয় কই? চোখের জলও শুকিয়ে যায়। যদিও ক্যালেন্ডারে আঁকা তার ছবিগুলি,  বাই ডিফল্ট ,ওভার ফ্লোয়িং। এক মানবীর যেন খালি কেঁদে যাওয়াটাই কাজ! কি অপচয়!কাঁদবো কি কাঁদবনা, কাঁদলে কখন কাঁদবো, কার জন্যেই বা কান্নাটি সিদ্ধ আর কার জন্য অসিদ্ধ --- এসব কি আর আমাদের হাতে? তোমরা যেমন চাও --- রুদালি কি পাষাণী!  ফিরে আসি মদিনায়। এই শহরে ঢোকার মুখে কেশব সামন্ত নাকি তোমায় সন্ন্যাস যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল? এটুকুই জেনেছি, আর কিচ্ছু জানিনা। সন্ন্যাস থেকে ফেরানোর চেষ্টা মাত্রই কি অপচেষ্টা? তোমার সন্ন্যাস তো অনেক দুষ্টু লোকের শান্তির কারণ হয়েছিল! কী হতো, যদি তুমি ঐ আঠারো বছর ব্যয় করতে আমাদের জন্য? কত কথাইতো মনে আসে!              ভেসে আসা ভাঙ্গা হাল, ছইটি যেমন,              হারানো সে নাওটির দেয় সংকেত,              ছোট ছোট ঘটনা উল্লেখ ----              ইঙ্গিতে জানায় বুঝি ,              কালের সলিলে ডুবে যাওয়া---              ভুলে যাওয়া কোনো সূত্র, অস্ফুট অজানা অভিপ্রেত!  গহন দর্শনের তত্ত্বকথাতো বুঝিনা ঠাকুর, এই চোখে কানে, অনুভবে যতটুকু। আছে সমব্যথী মন , আর এক ঝুড়ি ‘যদি’ নিয়ে কল্পনাগুলি।        কার কিবা ক্ষতি তাতে? কীবা আসে যায়?           গৃহীত,স্বীকৃত ইতিহাস,            পুনঃ পুনঃ আবৃত্তির            নিইনি তো দায়!           তবু, যদি কেউ ব্যথা পাও---           ক্ষমা পাবো জানিগো নিশ্চয়। কল্পনা করিতে জাগে সুখদাঁড়াযে সে---স্পর্ধিত অনার্য হৃদয়,হয়তোবা, পূর্বজ বজ্রযান স্মৃতি,যার কাছে নারী নয় সাধনার কাঁটা,রমন সম্ভারে লোভনীয় ---ব্যাক্তিহীন কেবল ঘরণী!নারী তার ---দেহ থেকে দেহতীত সত্যের সন্ধান ---সহস্র পদ্মের মাঝি পরাণের প্রাণঅপরিহার্য সাধন সঙ্গিনী। কিবা ঠিক,  কিবা ভুল ---পাপ ---- পুণ্য ----আড়ালে কি অন্য কারণ?জীবনের অতি বাস্তবতা,সমাজ,সংসার রাজনীতি?কালের আবর্ত হতে উদ্ধার পেয়ে কী ভাবে প্রতিষ্ঠা হবে আজ?বিপ্লবী দেবতা ----তব শিলাময় রূপ মস্তকে চাপিয়া ধরি,তবু কেন খুব চেনা ঘরোয়া হৃদয়কেঁপে ওঠে থির থির?কী বিষাদে আসে এই লাজ?  দিলদার নগরে রাতে হাওয়া,অলিগলি করে আসা যাওয়া,আফসোস করে বলেঃ হায় !এ বিষাদ আমাদেরও দায় !রাখিতে পারিনি তারে, চলি গিলা সম্মুখ দিয়া !ক্ষমা করো এ নগরে --- নিজ গুণে,ক্ষমা কর মাগো,বিষ্ণুপ্রিয়া!                          
  • জনতার খেরোর খাতা...
    হিন্দু খতরে মে হ্যায়  - Jishnu Mukherjee | জন্যসংখ্যার প্রশ্নে কিছু নতুন চিন্তা উকিঝুঁকি মারছে। দ্বিতীয় দফার তিনমাসের মধ্যেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনসংখ্যা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন। লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে তিনি জানান 'আমাদের জনসংখ্যার যে বিস্ফোরণ তা নিয়ে চিন্তা করতেই হবে।' তিনি আরও বলেন যে এটি আমাদের উন্নতির পথে প্রধানতম বাধা।কথা হলো যে, এই চিন্তাধারা আসামে ভ্রুন অবস্থায় ছিলো দুবছর আগে। এখন এটি পূর্ণবয়স্ক যুবকের আকার নিয়েছে উত্তরপ্রদেশে, যেখানে যোগী আদিত্যনাথের সরকার আইন কমিশন একটি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিলের খসড়া প্রকাশ করে জুলাই ২০২১ সালে এবং জনসাধারণের মতামত চায়। খবরে আছে কর্ণাটক এবং গুজরাটের বিজেপি সরকার উত্তরপ্রদেশের এই বিলের খসড়া খুঁটিয়ে দেখছে।আমি জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিভিন্ন তথ্য, টোটাল ফার্টিলিটি রেটের ধরণ এবং ভবিষ্যতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গণনা বিচার করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোদ্ধাদের দুশ্চিন্তার বিষয়টা খানিক বোঝার চেষ্টা করছিলাম। আমি আমার মতামত আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাইছি।এটা সহজেই অনুমেয় যে বেশিরভাগ পরিবারই তাদের সন্তান সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে চাইছে। আমাদের নিজেদের পরিবার বা আমাদের প্রতিবেশীদের পরিবারের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমার পরিবারের কথাই ধরা যাক। আমার মায়ের মা ১৩টি সন্তান প্রসব করেন যার মধ্যে আটজন বেঁচেছিলেন। তাঁর কিছু সন্তান তাঁর নাতি নাতনির থেকেও ছোট ছিল। অন্যভাবে বলতে গেলে আমার কিছু কাকু আমার বড়দিদির থেকে বয়সে ছোট। আমার মা পাঁচটি সন্তান প্রসব করেন। আমরা চারজন বেঁচেছিলাম। আমার স্ত্রীর একটি সন্তান। আমার সমস্ত ভাইবোনের একটি করে সন্তান। আমার বন্ধু এবং সহপাঠীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ, তা তাঁরা যে ধর্মেরই হোক না কেন, দুটি সন্তানের অধিকারী। যখন আমরা সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হলাম তখন কেউই আমাদের জোর করেনি। যা হয়েছে স্বেচ্ছায় হয়েছে।কিন্তু আপনারা আমাকে পক্ষপাতদুষ্ট ভাবতেই পারেন এবং অভিযোগ করতেই পারেন যে আমার দুনিয়া আমার পরিবার, আমার বন্ধুবর্গ এবং একই সামাজিক শ্রেণীর মানুষ দিয়ে তৈরী। সুতরাং আমি আমার প্রাতঃ এবং সান্ধ্যভ্রমণের সময় কিছু এমন মানুষের সাথে কথা বলি যারা আমার মতো সুযোগ সুবিধা কিছুই পাননি জীবনে। কিছু ঠিকা শ্রমিক, কিছু গৃহ পরিচারিকা, কিছু মহিলা যারা স্কুলে আয়ার কাজ করেন এবং একজন মেষপালক। এই ১৫ জন মানুষের মধ্যে ১২ জন দুটি সন্তানের অধিকারী। একজনের তিনটি সন্তান ও বাকি দুজনের একটি করে সন্তান। এই ১৫ জনের মধ্যে কেউ কেউ মধ্যবয়স্ক, যারা তুলনায় নবীন তারা আমায় জানায় যে তারা আর সন্তান চায় না।আমি একজন ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছি। আমি জানি যে আমার পরিবার, আমার প্রতিবেশী এবং উপরিউক্ত ১৫ জন মানুষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সামগ্রিকভাবে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে ধারা তার সম্বন্ধে সঠিক কোনো উপসংহারে আসতে পারে না। তবুও এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার তথ্য ভুল মানতে রাজী আছি কারণ নিশ্চয়ই অন্য কোন বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমার চোখের আড়ালে নচেৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেন স্বাধীনতা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে এতো চিন্তিত থাকেন।১৯৫০ থেকে ২০১১ এর টোটাল ফার্টিলিটি রেটের (TFR) দিকে তাকানো যাক। TFR হচ্ছে মহিলারা সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা থাকাকালীন যত সন্তানের জন্ম দেন তার গড়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সাল অবধি TFR ছিল ৫.৯। ১৯৫৭ সালে তা কিছুটা কমে। ২০০২ সালের মধ্যে TFR হয়ে যায় ২.৯। এবং ২০২১ সালে TFR হয় ২.১৭৯। এটি রিপ্লেশমেন্ট লেভেল যা হল ২.১ তার খানিকটা উপরে। রিপ্লেসমেন্ট লেভেল হচ্ছে দুজন সন্তান তার পিতামাতাকে রিপ্লেস করবে। যদি TFR ২ এর নিচে চলে যায় তাহলে প্রভূত অসুবিধার সৃষ্টি হয়- যেমন ওয়ার্কফোর্স কমে যাওয়া, বয়স্ক প্রজন্মের খেয়াল রাখার জন্য তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা কমে যাওয়া, অর্থনীতির মন্দা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল্যবৃদ্ধি। জাপান এক্ষেত্রে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছে।আমাদের দেশের TFR রিপ্লেশমেন্ট লেভেলের কাছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি তা জানেন না? তিনি কি তথ্যের দিকে না তাকিয়েই স্বাধীনতা দিবসের দিন চিন্তিত নাকি তিনি তথ্য অস্বীকার করেন। দুটোই আমাদের ভাবনার বিষয়।সরকারী পক্ষ থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিষয়ক চিন্তা প্রথম দানা বাঁধে আসামে। বিজেপি সরকার সেখানে ২০১৭ সালে জনসংখ্যা এবং নারী ক্ষমতায়ন বিষয়ক নীতি প্রয়োগ করে এই 'চিন্তা' দূর করতে। ২০০১ সালে আসামে TFR ছিল ৩.২। এটি এক দশকের মধ্যে ২.২ হয়ে যায় কোনোরকম নীতি প্রয়োগ ছাড়াই। আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা, যিনি ২০১৭ সালে অর্থমন্ত্রীও ছিলেন, তিনি বলেন ' সমীক্ষা বলছে যে হিন্দু জনসংখ্যা কমছে এবং সংখ্যালঘু জনসংখ্যা বাড়ছে। আমাদের স্বদেশীয় মানুষদের অধিকারের কথা ভাবতেই হবে'সুতরাং আসল চিন্তার বিষয় এটাই- 'সংখ্যালঘু' জনসংখ্যা বৃদ্ধি। মুখ্যমন্ত্রী হবার পর শর্মার প্রথম কাজটিই ছিল আসামের মুসলিম জনসাধারণকে একটি 'উপযুক্ত' ফ্যামিলি প্লানিং করতে বলা। শর্মা ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, তিনি বলেন বাসস্থানের জন্য লড়াই তীব্র আকার নেবে যদি না জনসংখ্যা আয়ত্তের মধ্যে থাকে। আমি একটি ইন্টারভিউ দেখেছি যেখানে তিনি বলছেন " আমার নিজের বাড়ি হয়তো বেদখল হয়ে যাবে একদিন" তিনি বলেন ২০২১ সালের ২৮শে জুন আসাম সরকার নির্দিষ্ট নীতি প্রয়োগ করবে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় যাতে দারিদ্র এবং অশিক্ষা দূর হয়। সুতরাং prodhan লক্ষই হলো মুসলিম জনসংখ্যা কমানো।কিন্তু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে(NFHS-5) আমাদের আসাম সম্পর্কে কী তথ্য দেয়? এই সার্ভে আমাদের জানায় যে আসামে মুসলিম সম্প্রদায়ের TFR হচ্ছে ২.৪। এটি হিন্দু (১.৬) এবং খ্রিস্টানদের(১.৫) TFR এর থেকে বেশি। কিন্তু আসল কথা হলো ২০০৫-০৬ সালে আসামে মুসলিম সম্প্রদায়ের TFR ছিল ৩.৭ যা ২০১৯-২০ সালে হয়ে যায় ২.৪ যা রিপ্লেসমেনেট লেভেল থেকে.৩ বেশি। কিন্তু তথ্য কে চায়? মানুষকে ভয় পাওয়াতে হবে। এই ভয়ের জোরেই ২০২১ সালে আসামে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে এবং ভয়ের ফেরিওয়ালা অর্থমন্ত্রী শর্মা আসামের মুখ্যমন্ত্রী হন।তবে শুধু আসাম কেন, বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যেও একই খেলা। আসামে বিজেপি ভোটের তিন বছর আগে যা করেছিল উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার ভোটের ছমাস আগে তাই করে। আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার দাবী করে যে ৯ই জুলাই ২০২১ সালে যে বিলের খসড়া তারা প্রকাশ করে তা তিন বছর ধরে বানানো হচ্ছে। আদিত্যনাথ ঘোষণা করেন যে এই বিল ২০২১-৩০ সালের জন্য ভাবা হয়েছে এবং এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ' বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধি আয়ত্তে আনা।'এই বিলে যাঁরা দুই সন্তান নীতিতে রাজী হবেন তাঁদের জন্য পুরস্কারের কথা লেখা আছে। যাঁরা সরকারী কর্মচারী তাঁরা যদি এই নীতি পালন করেন তাহলে ১২ মাসের সবেতন ছুটি পেনশনে তিন শতাংশ বৃদ্ধি। যদি স্বামী একটি সন্তানের পর ভ্যাসক্টমী করিয়ে নেন তবে পুত্র সন্তান হলে ৮০০০০ টাকা ও কন্যা সন্তান হলে একলাখ টাকা পাবেন। আর যাঁরা দুয়ের অধিক সন্তান জন্ম দেবেন তাঁরা সরকারী চাকরি পাবেন না, রেশন পরিবারের চারজনের জন্যই দেওয়া হবে।কিন্তু ইউপি তে কি এরকম নীতি প্রয়োজন। সে রাজ্যের TFR কী? দুর্ভাগ্যবশত কোভিড১৯ এর জন্য সে রাজ্যে NFHS-5 হয়নি। আমাদের NFHS-4 এর তথ্যের উপরই নির্ভর করতে হবে। এই সার্ভের মতে ইউপির ২০১৬ সালে TFR ছিল ৩.১। ওয়ার্ল্ড ডাটা আটলাস এর মতানুযায়ী ২০১৮ সালে এটি হয় ২.৯। ইউপির সরকারের মতে ২০২১ সালে TFR ছিল ২.৭। নতুন নীতির লক্ষ্য হল ২০২৬ এর মধ্যে এটিকে ২.১ এ নিয়ে আসা। হ্যাঁ, পাঁচ বছরে ০.৬ কমানো। যদিও তার জন্য সরকারকে এই নীতি প্রয়োগ না করলেও চলতো কারণ সারা দেশেই TFR নিম্নমুখী। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে এটি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ভাষায়, " বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে"। এবার দেখা যাক সত্যিই উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যার ভারসাম্য নিয়ে চিন্তার কোন বিষয় আছে কিনা। চলুন দেখে নিই হিন্দু ও মুসলিম মহিলাদের TFR এর পার্থক্য এবং বুঝে নিই যে এরকম কড়া নীতির কোন প্রয়োজন আছে কিনা।২০০১ থেকে ২০১১সালের মধ্যে হিন্দু TFR ১.৫ কমে যায়। যা ছিল ৪.১ তা নেমে আসে ২.৬ এ।এই একই সময়ে মুসলিম TFR ১.৯ কমে যায়। যা ছিল ৪.৮ তা হয় ২.৯। দেখাই যাচ্ছে যে হিন্দু মুসলিম TFR এর পার্থক্য দিন দিন কমেই আসছে। ২০০১ সালে এই পার্থক্য ছিল ০.৭ এবং ২০১১ সালে তা কমে হয় ০.৩। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হিন্দু ও মুসলিম উভয়েরই TFR কমছে। কোন রাজ্যেই TFR বাড়ছে না বা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। সর্বত্রই TFR কমছে।কিন্তু তথ্য কে চায়? শুধু দরকার ভয়। 'আমাদের' দারিদ্রের কারণ 'ওদের' জনসংখ্যা বৃদ্ধি।উত্তরপ্রদেশের এই বিল সম্বন্ধে অনলাইন কিছু মন্তব্য পড়লেই বোঝা যাবে যে এই ভয় কাজে দিচ্ছে।১. "এদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হোক নয়তো এরা [আমাদের ] হারিয়ে দেবে।"২. "এই নীতি সারা ভারতে চালু করা উচিত।"৩. "যারা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদের কী যায় আসে যে তারা সরকারী চাকরি পেল কি পেল না। আপনারা যদি সত্যি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে চান তবে তৃতীয় সন্তান জন্মের পরই ৫ লাখ টাকা জরিমানা করুন।"ইউপি সরকারের বিলের খসড়ার পরই কর্ণাটক ও বিহারের বিজেপি সরকার চাইছে এরকম বিল পাশ করতে। কর্ণাটকের বিজেপি নেতার মতে " জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঘটলে আমরা প্রতিটি নাগরিকের চাহিদা মেটাতে পারবো না কারণ সম্পদ সীমিত।" বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এক বক্তৃতায় বলেন যে বিহারের ফার্টিলিটি রেট কমছে। বিজেপি নেতা বলেন,"কমেছে হিন্দুদের, মুসলিমদের নয়"। তিনি আরও বলেন যে " সম্পদের পরিমাণ সীমিত এবং কিছু মানুষ জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে ভারতকে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। "কিন্তু রাষ্ট্রের অবস্থান ঠিক কোথায়? সুপ্রিমকোর্টে দুই সন্তান নীতি চালু করার জন্য একটি PIL এর বিরুদ্ধে ভারতীয় সরকার জানায় ভারতের TFR ক্রমশই কমছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সন্তানের নীতি আসলেই অকাজের। ভারতের TFR ২.২ তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক দুই সন্তান নীতি খারিজ করে দেয়।এই ঘটনা ঘটে প্রধানমন্ত্রীর ২০১৯ সালের ভাষণের যেখানে তিনি জনবিস্ফোরণ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তার দেড় বছর বাদে।এই ঘটনা ঘটে আসাম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রয়োগের দুবছর বাদে।এবং এই ঘটনার আট মাস বাদে উত্তরপ্রদেশ সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিলের খসড়া পেশ করে।তাহলে কোনটা নীতি আর কোনটা রাজনীতি?সরকার মহামান্য আদালতকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধে যা জানায় তা হল নীতি এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁর লালকেল্লার ভাষণে যা জানান তা রাজনীতি। বিজেপি শাসিত রাজ্যে যা হচ্ছে তা সেই একই রাজনীতি। 'আমরা' বনাম 'ওরা'র রাজনীতি। যাতে আমরা 'ওদের' ভয় পাই। 'আমরা' 'ওদের'  ত্যাগ করি। 'আমরা' বিজেপিকে ভোট করি, 'আমাদের' ধর্মের স্বার্থে, ভাষার স্বার্থে, 'শুধুমাত্র আমাদের' পরিচয়ের স্বার্থে।পারাকালা প্রভাকরের ২০২১ সালের লেখা এক প্রবন্ধের অক্ষম অনুবাদ। না, দায়িত্ব কেউ দেয়নি, তবে দায় তো থেকেই যায়।
    দেবতা অপদেবতা হেস্টিংস বার্ক - Eman Bhasha | লন্ডনে হেস্টিংসের অনাচার, অত্যাচার নিয়ে বিচার সভা বসেছে। হেস্টিংসের বিপক্ষে ৪৮ ঘন্টা ধরে বক্তৃতা করেছেন প্রখ্যাত বাগ্মী এডমন্ড বার্ক। বক্তৃতায় সবাই হেস্টিংসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এমন সময় হেস্টিংসের উকিল উঠে বললেন, আমি শুধু সামান্য একটা কথাই বলব। হেস্টিংস যদি এত খারাপ, তবে ভারতের সেরা জায়গা বারাণসী-- সেখানকার ব্রাহ্মণরা কেন হেস্টিংসের নামে মন্দির গড়েছেন?সবাই চুপ।অকাট্য যুক্তি।এডমন্ড বার্ক বললেন, এই বক্তৃতার জন্য আমি গত দু বছর ধরে ভারতের জনজাতি, ধর্ম, লোকাচার, সংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করেছি।তাতে জেনেছি, ভারতীয়রা দু ধরনের লোকের পূজা করে । এক ভালো দেবতা, যিনি উপকার করেন, যেমন সূর্যদেবতা। সকালে উঠেই লোকে প্রণাম করে।আর একজন আছেন অপদেবতা। যিনি লোকের ক্ষতি করেন। তাই তাঁকে তুষ্ট করতে তাঁর পূজা করে। যেমন শনি।হেস্টিংস হচ্ছে অপদেবতা।মার্কস মোদি মমতা --বই পড়ুন।বহু অজানা তথ্য পাবেন।সূত্র: মেকলের রচনাবলী 
    শেয়ার নিয়ে কি করিতে হইবে না!  - swarnab ghosh | আজকাল প্রচুর ছেলেমেয়ে প্রথম চাকরি পেয়ে হাতে কিছু টাকা আসতেই একটা শেয়ার ট্রেডিং একাউন্ট খুলে ফেলে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই খুলে ফেলা যায়, তারপর এদিক ওদিক থেকে টিপ্সের সাহায্যে শেয়ার ট্রেডিং করে। বুল মার্কেট থাকলে টুকটাক প্রফিটও হয়ে যায়, কিন্তু মজার ব্যাপার হল শেয়ার বাজারে প্রচুর ট্যাক্স! ওই দশ কুড়ি পঞ্চাশ হাজার দিয়ে ট্রেডিং করলে কাজের কাজ কিছু হয়না। এমনি কেনাবেচার ওপর ট্যাক্স, দিনের দিন কিনে বেচলে আলাদা ট্যাক্স, প্রফিট হলে তার ওপর ট্যাক্স। তো যাও বা প্রফিট হয়, আফটার ট্যাক্স প্রফিট প্রায় কিছুই হয়না। কিন্তু তবু তাতে কারোর কিছু যায় আসেনা। এটা একটা নেশার মত হয়ে দাঁড়ায়। অফিসেও আমি দেখেছি মিটিংয়ের ফাঁকে টুক করে একটু দেখে নিল কি দর যাচ্ছে! এই সর্বনেশে খেলাটা ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে প্যান্ডেমিকের পর থেকে। ২০২০ মার্চের শেয়ার বাজার ধ্বসকে কাজে লাগিয়ে অনেক ব্যবসায়ী এমন এমন শেয়ার এত কম দামে কিনে ফেলে যে মাসখানেকের মধ্যে বাজার রিকভার করতেই সেগুলোর ওপর প্রফিট হয়ে যায়। এগুলো ফেসবুক ইউটিউবের মাধ্যমে এত প্রচারিত হয়, যে লোকের ধারণা হয়ে যায় যে শেয়ার বাজারে টাকা ঢাললেই লাভ। ফিনফ্লুয়েনসার নামে একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়।  নিজেরা অন্যান্য ব্যবসা বা অত্যন্ত হাই পেয়িং কর্পোরেট চাকরি করে  প্রচুর টাকা কামিয়ে লোককে জ্ঞান দেওয়া আরম্ভ করে, কি করে তিরিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ হাজার মাইনের চাকরি করে একদিন কোটিপতি হতে পারবে! তাদের ভিডিওর ভিউজ দেখলেই বোঝা যায় ভারতবর্ষের herd mentality জনতা তাদের কতটা সিরিয়াসলি নেয়। তাই নতুন চাকরি পাওয়া ছেলেমেয়েরা ইন্স্যুরেন্স না কিনে, কোনো ইনভেস্টমেন্ট গোল ঠিক না করে, জীবনে কি করবে সেটাই ঠিক না করে, চটজলদি শেয়ার বাজারে খাতা খুলে ফেলছে। আমাদের চাকরিজীবনের শুরুর দিকে আমরা ইকুইটি মার্কেটকে একটু ভয়ই পেতাম। আমার অবশ্য কোনোদিনই টাকাপয়সা সেরম ছিল না, তাই জানতুমই না কিভাবে কি জমাতে হয় বা ইনভেস্ট করতে হয়! কিন্তু অন্যদের মুখে শুনতাম, এফডি, পিপিএফ, এলাইসি এসবই চলত। তখন সবে মিউচুয়াল ফান্ড গুটি গুটি যাত্রা শুরু করেছে, সেটাও অনেকে ভয়ে ভয়ে সমঝে চলত। তখন লোকে একদমই বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতনা, আর এখন আবার উলটো, এত সহজে রিস্ক নিয়ে ফেলে যে বুঝতেও পারেনা কি ক্ষতি হচ্ছে! তো এত কথা বলার উদ্দেশ্য একটাই, লক্ষ্মীর সাধনা করা ভাল, কিন্তু তার একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। শেয়ার বাজারে ফাটকা খেলার একটা অন্যতম আকর্ষণ হল, যা খুশি করা যায়। কেউ বলার নেই কখন কোন শেয়ার কিনব, কখন বেচব, পুরোটাই নিজের ইচ্ছায়! এই যা-ইচ্ছে-তাই করার স্বাধীনতা শেয়ার বাজার দেয় বলেই এর অমোঘ আকর্ষণ। এখনকার প্রজন্মের দৈনন্দিন জীবন তাদের চারদিক থেকে এত রকম ভাবে চেপে ধরে বলেই একটু নিজের শর্তে বাঁচার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় শেয়ার। আমার মনে হয় জীবনে অন্যরকম আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করলে, নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করলে, ক্রিয়েটিভ কিছুতে মনোযোগ দিলে এই শেয়ারের নেশা কেটে যাবে। আর সত্যি শেয়ার থেকে লাভ করতে হলে কমপক্ষে দশ থেকে পনেরো বছরের টাইমফ্রেম নিয়ে নামতে হবে, শর্টকাট কিছু নেই। যাই হোক, আমার টেড টক শোনার জন্য ধন্যবাদ!
  • ভাট...
    commentকালনিমে | যদ্দুর জানি nvidia মেশিন এসবের জন্য ড্জিটাল টুইন প্ল্যাটফর্ম বানিয়েছে - ক্ন্তু HDT শুনিনি আগে তাই জানতে চাইলাম।
    commentসমরেশ মুখার্জী | অরিনলান সমীপে
     
    আগামী দু’বছর অরিনলান ওনার ড্রিম প্রোজেক্ট নিয়ে ব‍্যস্ত হয়ে পড়বেন। ফলে হয়তো গুরুতে আর সেভাবে পা‌ওয়া যাবে না ওনাকে। তাই অনুরোধ র‌ইলো গুরুতে অরিনলানের একটা HDT ছেড়ে যাওয়া যে ওনার হয়ে নানা ব‍্যাপারে মন্তব্য করবে। কখনো ট‌ই খুলবে। 
     
    সময় পেলে অরিজিনাল অরিনলান কখনো চেক করে দেখবেন ওনার HDT গুরুতে কাঙ্খিত মিথস্ক্রিয়া করছে কিনা। প্রয়োজনে একটু ফাইনটিউন করে দেবেন। heart
     
    তবে দু’বছর পরে ওনার HDT যদি গুরুতে ওনাকে‌ই রিপ্লেস করে দেয় - তাহলেই কেলো। একটা গল্পের আইডিয়া এলো। কখনো খেলিয়ে লিখতে হবে। laugh  
    commentঅরিন  | কালনিমে , কেকে , অমিতাভ , &/, দ , :।:, অরণ্য, এলসিএম, b , আপনাদের প্রত্যেককে  অজস্র ধন্যবাদ এবং আপনাদের  উৎসাহ পেয়ে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ ।  
    এই প্রজেক্ট টা নিয়ে গত দেড় বছর ধরে নিজের অবসরে কাজ করতাম, কতবার যে কত জায়গায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছি তার ইয়ত্তা নেই, সেসবের কিছু গল্প এখানে মনে হয় একবার লিখেও ছিলাম যে স্টার্টআপ পিচের কি সব অভিজ্ঞতা ।  
     সামনের দুটো বছর খুব ইন্টারেষ্টিং যাবে মনে হচ্ছে । :।:, "এর মতো ভালো খবর মিষ্টি ছাড়াই শেয়ার করলেন? নিদেন সামান্য ঘুগনী-নিমকিও যদি রাখতেন! " এহে , এটা একটা মস্ত ভুল হয়েছে ।  ঘুঘনি নিমকি তে হবে না । তবে মিষ্টিমুখ না করাতে পারার  অবিশ্যি একটা কারণও বা অজুহাতও বলতে পারেন, আছে ।  আমি  দেখছিলাম যে কোন ওয়েবসাইট বা সার্ভিস আছে কিনা যেখানে মনে করুন যিনি খাওয়াতে চান তিনি  মিষ্টি কিনে রাখলেন , তারপর যাকে যাকে মিষ্টি দেবার, তাদের (যেমন গুরুচন্ডালির সবাইকে) লিংক শেয়ার করলেন , এবং সেই লিংক এ গিয়ে যে যার নিজের পছন্দ মতন মিষ্টি ডাউনলোড করে বাড়িতে আনিয়ে  নিলেন । সেরকম কোন সার্ভিস দেখতে পেলাম না ।  অতএব । আমার তরফে স্ট্যান্ডিং অফার রইল, আজকের পর গুরুচন্ডালি গ্রূপের যে কোন সদস্যের সঙ্গে পৃথিবীর যে প্রান্তেই যেদিন আমার  দেখা হবে, আজকের দিনের অনারে মিষ্টি খাওয়াবো, :-)  অমিতাভ, "এতে যে কোনরকম সাফল্যই দূরপ্রসারী প্রভাব রাখবে, এমনকি বিফলতাও অনেক কিছু জানাবে।" এটা  একটা দারুন রকম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, কারণ এই মুহূর্তে আমরা কেউ জানি না, শেষ অবধি কি দাঁড়াবে বা জনতা আদৌ একটা ডিজিটাল টুইন চায় কি না ।  এসব জিনিসের যে কত রকমের pitfalls তার প্রায় কিছুই না জেনেশুনে দুম করে ঝাঁপ মেরেছি, জানি না কি হতে চলেছে । যাকগে যা হয় হবে । কালনিমে, "এই digital twin কি কোন proprietary tool নিয়ে কাজ করবেন না কোন open standards/ framework আছে? ডেটা কি public domain এ? " একটা ওপেন স্ট্যান্ডার্ড আছে তবে সেটা অন্যরকম ডিজিটাল টুইন এর , যন্ত্রপাতির ডিজিটাল টুইন এর  OpenTwin ( https://ertis-research.github.io/opentwins/ ) । আমাদের কাজে  নিজেদের ফ্রেমওয়ার্ক নিজেদের তৈরী করতে হবে । আমরা ফ্রী ওপেন সোর্স ডেভেলপ করব ।  গুরু একটা দারুন প্রশ্ন রেখেছিলেন যে আজ থেকে বছর তিরিশেক পরে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় AI /ML কি ধরণের প্রভাব আনতে পারে । অনেক কিছুর পরিবর্তন হবে ব্যাপারটা ধরে নেয়া যেতে পারে । এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তত আমার মনে হয়  উষ্ণায়ন (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) । উষ্ণায়ণের সূত্রে এমন অনেক বিষয় আসবে যেগুলোর সমাধান করতে গেলে এ আই এর একটা সদর্থক ভূমিকা থাকবে বিশেষ করে পৃথিবীর অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলোতে । 
     
     
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত